সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনায় পটু, সংস্কৃতি চর্চাই বেশি পছন্দ মাধ্যমিকে নবম ময়ূখের
প্রতিদিন | ০৩ মে ২০২৫
অভিষেক চৌধুরী, কালনা: দিনভর বইমুখো হয়ে থাকা নয়, বরং সংস্কৃতি চর্চাই বেশি পছন্দ মাধ্যমিকের মেধাতালিকার নবম স্থানে থাকা ময়ূখ বসুর। কালনার ২ নং ব্লকের মাতিশ্বারের বাসিন্দা ময়ূখের এহেন উজ্জ্বল ফলাফলে পরিবার তো বটেই, খ্যাতি বেড়েছে তার স্কুলের। প্রত্যন্ত এলাকার কাঁকুড়িয়া দেশবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম ময়ূখের দৌলতেই প্রচারের আলোয় এসেছে। ৬৮৭ নম্বর পেয়ে রাজ্যের মধ্যে নবম স্থান পাওয়া ময়ূখ এখন শুভেচ্ছার বন্যায় ভাসছে। তবে আর পাঁচজনের মতো কেরিয়ার ধর্মী পড়াশোনায় সে মোটেই আগ্রহী নয়। সাহিত্য পত্রিকা-সহ সাংস্কৃতিক চর্চা নিয়ে থাকতে চায় ময়ূখ।
মাধ্যমিকের মার্কশিটে ৬৮৭ নম্বরের মধ্যে ময়ূখ বাংলায় পেয়েছে ৯৭, ইংরাজিতে ৯৮, অঙ্ক, জীবনবিজ্ঞান ও ভূগোল ? তিনটিতেই ৯৯ ভৌতবিজ্ঞানে ১০০, ইতিহাসে ৯৫। ময়ূখের এই ফলাফলে ভীষণ খুশি তার মা-বাবা। মা মৌসুমী তার স্কুলের পার্শ্বশিক্ষিকা, বাবা সুদয় বসু প্রাক্তন বিএসএফ কনস্টেবল। এত ভালো রেজাল্টের পর স্কুলের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় ময়ূখকে। তবে স্কুলের শিক্ষকদের আশা ছিল, সে আরও একটু বেশি নম্বর পাবে।
বইয়ের পাতাতেই শুধু আটকে থাকা নয়, সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলই বেশি পছন্দের ময়ূখের। খেলাধূলায় সেইভাবে মন দিতে না পারলেও নাচ-গান, কবিতাপাঠ, অভিনয়ের পাশাপাশি কিবোর্ড থেকে অক্টোপ্যাড, গিটার বাজাতেও সে সমান দক্ষ। হলে গিয়ে সিনেমা দেখাও ভারী পছন্দের তার। কয়েক মাস আগেই ‘বেলাশেষে’ সিনেমাটি দেখেছে। সেই অভিজ্ঞতা এখনও ভুলতে পারছে না। ২০২৩ সালে রাজ্যস্তরের তাৎক্ষণিক বক্তৃতা প্রতিযোগিতাতেও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। তার পছন্দের বিষয় অঙ্ক, বিজ্ঞান হলেও সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ তার ভীষণরকমের।
সংস্কৃতিমনস্ক ময়ূখ গত দু’বছর ধরে নিজের উদ্যোগে ‘বৈশাখী’ নামের একটি করে সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করে চলেছে। গতানুগতিক শিক্ষা থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। এত কিছুর মাঝেও প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে থাকা মায়ের স্কুলেই সে পড়াশোনা করে। চার-পাঁচ ঘন্টা পড়াশোনা ও পাঁচজন প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়েছে ময়ূখ। তার এই সাফল্যে বাধা নয়, বরং সহায়ক হয়ে উঠেছিল স্মার্টফোন। ময়ূখ জানায়, “সারাবছর স্মার্টফোন দেখে অনলাইনে ক্লাস করেছি। যা পড়াশোনার সহায়ক হয়ে উঠেছিল। বিনোদনের জন্যও ফোন ব্যবহার করতে হয়।”
ভবিষ্যতে সে নিজের দেশেই থাকতে চায়। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর হালদার বলেন, “শুধু পড়াশোনাতেই নয়, নাচগান, আবৃত্তি, নাটক, ক্যুইজের মত বিভিন্ন ক্ষেত্রে ময়ূখের প্রতিভা রয়েছে। খুবই অনুগত। আমরা আশা করেছিলাম, ও ৬৯০ পাবে। যাই হোক আশানুরূপ ফল করেছে। আমাদের স্কুলে আজ পর্যন্ত কেউ মেধা তালিকায় আসেনি। ওর জন্যই এবার তা সম্ভব হয়েছে।”