পর পর দু’দিন, দুই ছেলের দেহ উদ্ধার। গঙ্গায় স্নান করতে গিয়ে বাড়ি ফেরা হলো না নিলয় ও নীলেশ নামে সহোদর দুই ভাইয়ের। দুই ছেলের মৃত্যুর খবরে ঘনঘন জ্ঞান হারাচ্ছেন মা গীতা বিশ্বাস। বার বার আউড়ে চলেছেন, ‘কত করে বললাম যাস না। কথা শুনলো না। আমাদের সব শেষ হয়ে গেলো।’ বৃহস্পতিবার মাজদিয়া রেলবাজার থেকে নবদ্বীপে গঙ্গাস্নান করতে গিয়েছিলেন নিলয় বিশ্বাস (২৫) ও নীলেশ বিশ্বাস (২২)। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আরও দু’জন। চার জনই গঙ্গায় নেমেছিলেন স্নান করতে। তলিয়ে যান নিলয়, নীলেশ। শুক্রবার নিলয়ের দেহ উদ্ধার হয়েছিল, শনিবার উদ্ধার হলো নীলেশের দেহ।
বাবা নিতাইপদ বিশ্বাসের মাজদিয়ায় রেলবাজারে রেডিমেড কাপড়ের দোকান। বড় ছেলে নিলয়ও ব্যবসা করতেন। নীলেশ কলকাতায় বিসিএ পড়তেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা নাগাদ গাড়ি নিয়ে তাঁরা নবদ্বীপ যান। সঙ্গে ছিলেন গাড়ির চালক সন্দীপ সমাদ্দার ও দোকানের কর্মী সুদীপ দে। শিবভক্ত নিলয় শিবের জন্যই জল নিতে নবদ্বীপ আসেন।
কলেজ ছুটি থাকায় দু’দিনের জন্য বাড়ি এসেছিলেন নীলেশ। শুক্রবার তাঁর কলকাতা ফেরার কথা ছিল। নিলয়-নীলেশের বাবা জানান, বার বার ছেলেদের বলেছিলেন, গঙ্গায় যেন না নামে। কারণ, দুই ছেলের কেউই সাঁতার জানতেন না।
শুক্রবার নবদ্বীপের গৌরাঙ্গ সেতুর কাছে একটি দেহ উদ্ধার হয়েছিল। পরে বিশ্বাস পরিবার দেহ শনাক্ত করে। শনিবার শান্তিপুর থানার অন্তর্গত হরিপুর গ্রামপঞ্চায়েতের মেথির ডাঙা এলাকায় গঙ্গায় ভেসে ওঠে আরও এক দেহ। শান্তিপুর থানার পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে। মৃতের বাবা ঘটনাস্থলে গিয়ে ছেলের দেহ শনাক্ত করেন। মৃতদেহটি শনিবার ময়নাতদন্তের জন্য রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নবদ্বীপ থানার আইসি জলেশ্বর তিওয়ারি জানান, মোট চার জন একটি গাড়িতে গঙ্গাস্নানে এসেছিলেন। স্নান করতে নেমে চার জনই তলিয়ে যাচ্ছিলেন। এক ব্যক্তি তা দেখার পর জলে নেমে দু’জনকে কোনওক্রমে উদ্ধার করেন। বাকি দু’জনকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। পরে পুলিশ এবং কুইক রেসপন্স টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করে। শুরু হয় তল্লাশি। পর দিনই এক ভাইয়ের দেহ নবদ্বীপের গঙ্গায় উদ্ধার হয়েছে। আরেক জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে শান্তিপুর থানা এলাকায়। দেহ দু’টি ইতিমধ্যেই ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।