টুরিস্ট ভিসায় এসে আর ফেরা হল না, চন্দননগরে গ্রেপ্তার পাকিস্তানি নাগরিক...
আজকাল | ০৪ মে ২০২৫
মিল্টন সেন, হুগলি: রাওয়ালপিন্ডি থেকে ভারতে এসেছিলেন। টুরিস্ট ভিসা নিয়ে এসেছিলেন ভারতে ঘুরতে। আর ফিরে যাননি পাকিস্তানে। বিয়ে করে গত ৪৫ বছর ধরে থাকছিলেন চন্দননগরে। শনিবার চন্দননগর কুঠিরমাঠ এলাকা থেকে ফতেমা বিবি নামে পাকিস্তানি নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে চন্দননগর থানার পুলিশ। ফাতেমা বিবির স্বামী সন্তান, সন্তানরা রয়েছেন চন্দননগরে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮০ সালে টুরিস্ট ভিসা নিয়ে বাবার সঙ্গে ভারতে বেড়াতে এসেছিলেন ফতেমা। পরবর্তী সময়ে ১৯৮২ সালে চন্দননগরের এক বেকারি মালিক মুজফফর মল্লিকের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। তাঁদের দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। এতদিন ধরে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের খাতায় ফতেমা নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজ ছিলেন ভিসা নিয়ে ভারতে আসার এক বছর পর থেকেই।
সম্প্রতি চন্দননগর কমিশনারেটের স্পেশাল ব্রাঞ্চ একটি অভিযোগ দায়ের করে চন্দননগর থানায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে এদিন ফতেমা বিবিকে গ্রেপ্তার করে চন্দননগর থানার পুলিশ। এদিন তাঁকে চন্দননগর মহকুমা আদালতে তোলা হলে আদালত তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয়। চলতি মাসের আগামী ১৬ তারিখ পুনরায় শুনানির দিন ধার্য্য হয়েছে। আদালতের নির্দেশে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে চন্দননগর থানার পুলিশ।
সম্প্রতি কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। তার পরই ভারত সরকারের তরফে এদেশে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিগত দিনে যাঁরা পাকিস্তান থেকে ভারতে এসে রয়ে গেছেন, শুরু হয় তাঁদের খোঁজ।
চন্দননগরের কুঠির মাঠ সংলগ্ন মসজিদের পিছনে মুজফফর মল্লিকের দোতলা বাড়ি। সেই বাড়ি থেকে এদিন ফতেমা বিবিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দীর্ঘ দিনের প্রতিবেশী হঠাৎ বিদেশী নাগরিক হিসাবে গ্রেপ্তার হওয়ায়, হতবাক স্থানীয়রা। আইনি জটিলতা কাটিয়ে ফতেমার মুক্তি চাইছে পরিবার। যদিও ফতেমার পাকিস্তানে কেউ নেই। তাঁর আত্মীয়স্বজন যারা আছেন, সবাই থাকেন ভারতে।
এদিন গ্রেপ্তারের পর ফতেমার মেয়েরা জানিয়েছেন, হুগলির নালিকুলে ছিল ফতেমার আদি বাড়ি। অর্থাৎ নালিকুলে ছিল পূর্বপুরুষদের বাড়ি। সেখানেই তাঁর জন্ম। পরে কাজের সূত্রে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি চলে গিয়েছিলেন ফতেমার বাবা। সেখান থেকেই পুনরায় ভারতে আসেন ১৯৮০ সালে। বর্তমানে ষাট বছর বয়স হয়ে গেছে ফতেমার। নানা ধরনের ওষুধ খেতে হয় তাঁকে। ডাক্তার দেখানো হয়েছে। হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করতে হবে। পরিবারের দাবি, অবিলম্বে তাঁকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়। ফতেমার স্বামী মুজফফর মল্লিক জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী চন্দননগর কর্পোরেশনের বারো নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। তাঁর আধার কার্ড, প্যান কার্ড সবই আছে। ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এতদিনেও তা হয়নি।