• আইএসসি-তে শীর্ষ স্থান অধিকার করল কলকাতার মেয়ে সৃজনী, কিন্তু তার নেই কোনও পদবি, কেন?...
    আজকাল | ০৪ মে ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: কলকাতার দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুলের ছাত্রী সৃজনী। এই বছর আইএসসি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে সে। কেবল তার ভাল ফলের জন্যই নয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয় সকল ধরণের বৈষম্যের বিরুদ্ধে তার নীতিগত অবস্থানের জন্যও খবরের শিরোনাম এখন সৃজনী। 

    ১৭ বছর বয়সী এই কিশোরী তার পদবি ত্যাগ করেছে। তার ঘোষণা, তিনি যে একটি মাত্র ধর্ম অনুসরণ করেন তা হল 'মানবতা'।

    দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষার আগে, সৃজনী কাউন্সিলের রেকর্ডে বিনা পদবীতে কেবল তার প্রথম নাম রেজিস্টার করার জন্য বিশেষ আবেদন করেছিল। তার অনুরোধটি গৃহীত হয়েছিল।

    সৃজনীর স্কুলের অধ্যক্ষ রঞ্জন মিত্র জানান, প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে এই নিয়ে কোনও আপত্তি নেই। তিনি বলেন, "যতক্ষণ আইন মেনে চলা হয়, ততক্ষণ এটি আমাদের জন্য কোনও সমস্যা নয় এবং এটি বাধ্যতামূলকও নয়। আমি বিশ্বাস করি প্রতিটি ব্যক্তিকে তাঁদের আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার অনুমতি দেওয়া উচিত, এবং যদি পরিবার চায়, আমরা তা মেনে নেব।" 

    সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে একটি সৃজনী তার এই পদক্ষেপের কথা জানায়। সে জানিয়েছে, "আমি সকল ধরণের বৈষম্যের বিরুদ্ধে- সামাজিক, অর্থনৈতিক বা ধর্মীয়। সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন এবং ধর্মীয় উগ্রতা বিভেদ সৃষ্টিকারী শক্তি।" 

    তার আরও বক্তব্য, "একটি বহুসংস্কৃতির সমাজ কেবল সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সমতাবাদী ধারণার মাধ্যমেই সমৃদ্ধ হতে পারে। আমি এমন একটি সমাজের স্বপ্ন দেখি যেখানে কোনও অভয়া (আরজি কর নির্যাতিতা), কোনও ধর্মীয় যুদ্ধ এবং কোনও শ্রেণিবিন্যাস থাকবে না।"

    সৃজনী নানা সামাজিক আন্দোলনেও সক্রিয়। তার বোন এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে সে গত ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট রাতে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মহিলা ডাক্তারি পড়ুয়ার ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার প্রতিবাদে 'রিক্লেইম দ্য নাইট' প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

    সৃজনীর এই সিদ্ধান্তের পিছনে তার অভিভাবকদের অনেক ভূমিকা রয়েছে। তার মা গোপা মুখার্জি গুরুদাস কলেজের সহকারি অধ্যাপক এবং বাবা দেবাশিষ গোস্বামী ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের গণিতবিদ। দেবাশিষ ২০১২ সালে শান্তি স্বরূপ ভাটনাগগ পুরষ্কার পেয়েছেন।

    সৃজনীর মা বলেন, "বিয়ের পর আমি আমার পদবি পরিবর্তন করিনি। সন্তানদের কাছে উভয় পদবি ব্যবহার করার বিকল্প ছিল। আমি এবং আমার স্বামী পিতৃতন্ত্র এবং বর্ণ শ্রেণীবিন্যাসের বিরুদ্ধে, এবং আমরা চাই আমাদের সন্তানরা জাতি, ধর্ম এবং ধর্মের কোনও বোঝা ছাড়াই মুক্ত মনে বেড়ে উঠুক। প্রথমত, তাদের মানবিক হওয়া উচিত।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের সন্তানরা আমাদের সিদ্ধান্তকে সম্মান করে, এটা আমাদের অত্যন্ত আনন্দ দেয়।”

    গোপা আরও জানিয়েছেন, তাদের সন্তানদের জন্মের সময় জন্ম শংসাপত্রে তাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে পদবি লেখার জায়গাটি খালি রেখেছিলেন। তিনি বলেন, "আমরা কখনও এটি নিয়ে কোনও বড় প্রশ্নের মুখোমুখি হইনি। কোথাও পদবি বাধ্যতামূলক নয়, এমনকি পাসপোর্টেও নয়, তবে এটি একটি মানসিকতা। আমরা আমাদের পদবি ব্যবহার করি কিন্তু আমাদের ধর্মকে 'মানবতা' হিসাবে উল্লেখ করি।" 

    সৃজনীর এই সিদ্ধান্ত শিক্ষাক্ষেত্রের বাইরেও প্রশংসা অর্জন করেছে। রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী এবং টালিগঞ্জের বিধায়ক অরূপ বিশ্বাস তাকে অভিনন্দন জানাতে রানীকুঠিতে তার বাড়িতে গিয়েছিলেন। অরূপ সৃজনীর পদবি ত্যাগের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন, তার সাহস এবং সামাজিক আদর্শের প্রতি অঙ্গীকারের প্রশংসাও করেন।

    ভবিষ্যতের সৃজনী বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (IISc) থেকে পদার্থবিদ্যা বা গণিতে পড়াশোনা করতে চায়। বর্তমানে এই শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

    (ছবি: সংগৃহীত)
  • Link to this news (আজকাল)