রণজয় সিংহ: বাবা পেশায় টোটোচালক। তাঁর মেয়ে রাজ্যে হাই মাদ্রাসা (High Madrasa) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে। নাম সাহিদা পারভিন। মালদার চাঁচোল (Chanchal Malda district) থানার বটতলা আদর্শ মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল সে। তার সঙ্গে যুগ্মভাবে প্রথম স্থান অর্জন করেছে ফাহামিদা ইয়াসমিন। তার বাড়ি মালদার সামসি হাসপাতাল মোড়ে। সে ভগবানপুর হাই মাদ্রাসা থেকে এ বছর পরীক্ষা দিয়েছিল। এই দুই ছাত্রীই পরীক্ষায় ৮০০-র মধ্যে ৭৮০ নম্বর পেয়ে রাজ্যে যুগ্মভাবে প্রথম স্থান অর্জন করে।
এই খবর জানতে পেরে দুই মেয়ের দুটি পরিবারই আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। সাহিদা বাংলায় ৯৯, ইংরেজিতে ৯৬, অংকে ৯৯, ভৌত বিজ্ঞানে ১০০, জীবন বিজ্ঞানে ৯৬, ইতিহাসে ৯৫, ভূগোলে ৯৬ এবং ইসলাম পরিচয়ে ৯৯ নম্বর পেয়েছে। কিন্তু তবুও দুশ্চিন্তা সাহিদা পারভিনের মনে।
সামান্য টোটোচালক
কেন? কারণ, সাহিদার বাড়ি মালদার রতুয়া-১নং ব্লকের ভাদো গাম পঞ্চায়েতের ছোটো বটতলা গ্রামে। বাবা সামসুদ্দোহা সামান্য এক টোটোচালক। মা সায়েমা বিবি সাধারণ গৃহবধূ। অথচ, সাহিদার স্বপ্ন চিকিৎসক হবে সে। কিন্তু বাড়ির আর্থিক পরিস্থিতির জন্য তার সেই স্বপ্ন সফল হবে কি না, মনে রয়েছে তার সেই আতঙ্ক। সাহিদা জানায়, বটতলা আদর্শ মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল বটে। কিন্তু ছোটো থেকেই সে পড়াশোনা করেছে ভাদো এলাকার এক আবাসিক গার্লস মিশনে। বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। তাই বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়। কিন্তু পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কারণে কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছে। সে চায় সরকার তার পাশে এসে দাঁড়াক। পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিক।
যুগ্মভাবে প্রথম ফাহমিদা
অন্য দিকে, সাহিদার সাথে যুগ্মভাবে প্রথম স্থান অর্জন করেছে ফাহমিদা। সে জানায়, তার এই কৃতিত্বের পেছনে তার পরিবার-সহ রয়েছেন তার শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁর সাফল্যের পিছনে তাঁদের প্রচুর অবদান। সে-ও চায় ডাক্তার হতে।
ফেরিওয়ালার মেয়ে আলিফনুর খাতুন
প্রসঙ্গত, এ বছরের রাজ্য হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান অধিকার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে মোথাবাড়ি থানার বাহাদুরপুর এলাকার এক ফেরিওয়ালার মেয়ে আলিফনুর খাতুন। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৭২ । ২০২৪ ২৫ শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদীয়া হাই মাদ্রাসার ছাত্রী আলিফনুর খাতুনের এই রেজাল্টে তার স্কুল তথা তার এলাকার সকলের মনে আনন্দের সুর। আলিফনুর ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী। পড়াশোনার পাশাপাশি অন্য কোন বিষয়ে সেরকম আগ্রহ তার কোনও দিনই ছিল না। তার প্রিয় বিষয় ছিল ইতিহাস। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল, সে বড় হয়ে চিকিৎসক হবে। তবে তারও চিন্তা, তাদের আর্থিক পরিস্থিতি। উল্লেখ্য, এই বছরে হাই মাদ্রাসা রেজাল্টে মালদার জয়জয়কার। মেধা তালিকায় ১৫ জনের মধ্যে ১২ জনই মালদা জেলার।