কিরণ মান্না: কাঁথি: দারিদ্র্য কখনও স্বপ্নকে আটকে রাখতে পারে না-- এরই জীবন্ত প্রমাণ পূর্ব মেদিনীপুরের গিমাগেড়িয়া ওয়েলফেয়ার হাই মাদ্রাসার ছাত্র আক্রাম আলী খান। মধ্যমিকে হাই মাদ্রাসা বোর্ডে অসাধারণ সাফল্য পেয়েছে আক্রাম-- ৭৪১ নম্বর পেয়ে সে জেলায় প্রথম হয়েছে। এই কৃতিত্বের পেছনে আছে তার অসীম পরিশ্রম, অদম্য মানসিকতা এবং এক দরিদ্র দিনমজুর বাবার আত্মত্যাগ।
বাবার আত্মত্যাগ
আক্রামের বাবা আকবর আলী খান একজন দিনমজুর। বাড়ি কাঁথি থানা এলাকার গোবিন্দ বেরাবাড়। ছেলের ভবিষ্যৎ গড়তে তিনি ওভারটাইম কাজ করেছেন, দিনের পর দিন না খেয়ে পরিশ্রম করেছেন, শুধুমাত্র একটি স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য-- আক্রাম একদিন বড় মানুষ হবে। সেই ছেলেই আজ নিজের যোগ্যতায় মধ্যমিকে নজর কেড়েছে গোটা জেলার।
করোনার সময় কাছের অনেককে হারিয়ে আক্রামের মনে জন্মেছে গভীর দুঃখ ও প্রতিজ্ঞা। তখন থেকেই সে স্থির করেছে, ডাক্তার হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াবে, জীবন বাঁচাবে। তার সেই স্বপ্ন এখন একটু একটু করে বাস্তবের দিকে এগোচ্ছে। কিন্তু বড় এক বাধা এসে দাঁড়িয়েছে সামনে-- উচ্চশিক্ষার খরচ।
সহযোগিতা
গিমাগেড়িয়া আল ফাকিয়া একাডেমি এতদিন পর্যন্ত তাকে ছাত্রাবাসে রেখে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। শিক্ষকরা পাশে থেকেছেন। কিন্তু মাধ্যমিকের পর উচ্চশিক্ষার খরচ কী ভাবে বহন করা যাবে, তা নিয়ে আক্রামের পরিবার দিশেহারা।
আক্রামের বাবা আকবর আলী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ছেলেকে ডাক্তার করতে চাই। ও মানুষের জন্য ভাবতে শিখেছে। কিন্তু টাকা কই? এতদিন যেভাবে করেছি, আর পারছি না। কেউ যদি একটু সাহায্য করত, আমার ছেলেটা দেশের ও দশের উপকারে আসত।
সহানুভূতি
সংশ্লিষ্ট মহল মনে করে, এই প্রতিভাবান ছাত্রটির জন্য সরকারি সাহায্য বা দানশীল সংস্থার সহানুভূতির প্রয়োজন আজ খুব বেশি। সামান্য একটু সহযোগিতা পেলেই আক্রামের স্বপ্ন শুধু বাস্তবই হবে না, দেশের অগণিত মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে সে। আশা করা যায়, সমাজ, সরকার এবং দয়ালু হৃদয়গুলি এগিয়ে আসবে এই মেধাবী সন্তানের পাশে। আজ রেজাল্ট হাতে পাওয়ার পর অনেকে এই ছাত্রের পাশে দাঁড়িয়ে সাবাস বাহবা জানিয়েছেন।