• বিষ্ণুপুর মহকুমায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে বাদাম চাষ
    বর্তমান | ০৪ মে ২০২৫
  • সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: চলতি বছরে বিষ্ণুপুর মহকুমায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। তার মধ্যে বেশিরভাগ চাষ হয়েছে বিষ্ণুপুর ও সোনামুখী ব্লক এলাকায়। বাকি জয়পুর, কোতুলপুর, পাত্রসায়র ও ইন্দাসে কিছু চাষ হয়েছে। আগে আলু তোলার পর চাষিরা তিল চাষ করতেন। কিন্তু, তার থেকে কম পরিশ্রমে লাভ বেশি হওয়ায় বাদাম চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। তাই বাদাম চাষের এলাকা ক্রমশ বাড়ছে।

    কৃষিদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, গত কয়েকবছরে বাদাম চাষের প্রতি চাষিদের ঝোঁক বেড়েছে। বিশেষ করে আগে স্থানীয়ভাবে বাদাম বিক্রির তেমন বাজার ছিল না। বর্তমানে জমি থেকেই তা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, জেলার বিভিন্ন জায়গায় বাদামের খোসা ছাড়ানোরও মেশিন বসছে। তাই আগামী দিন বাদাম চাষের এলাকা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

    কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে বিষ্ণুপুরে দ্বারকেশ্বর ও দামোদর তীরবর্তী এলাকায় খুবই সামান্য পরিমাণ বাদাম চাষ হতো। এবার শুধু বিষ্ণুপুর ও সোনামুখী ব্লক এলাকাতেই দু’হাজার হেক্টরেরও বেশি বাদামের চাষ হয়েছে। দ্বারকেশ্বর ও দামোদর নদ তীরবর্তী এলাকা ছাড়াও অনেক উঁচু জমিতেও চাষিরা চাষ করেছেন। এক বিঘা জমিতে প্রায় ৩০কেজি বাদামের বীজ লাগে। কেজি প্রতি বীজের দাম ১৩০টাকা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আলু তোলার পর বাদাম চাষ করা হয়। সেই জন্য সারের বিশেষ দরকার পড়ে না। কেবলমাত্র সময়মতো সেচ দিলেই হয়। খেতমজুর সহ সমস্ত কিছু মিলিয়ে বিঘা প্রতি খরচ হয় সর্বাধিক ১০হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে প্রতি বিঘায় পাঁচ কুইন্টালেরও বেশি বাদাম পাওয়া যায়। যার দাম প্রতি কুইন্টাল পাঁচ হাজার টাকা। অর্থাৎ, এক বিঘা বাদামে মোট আয় হয় ২৫হাজার টাকা। খরচ বাদ দিলে ১৫হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হতে পারে।  

    বিষ্ণুপুরের মড়ার গ্রামের চাষি সইফুল্লা খান বলেন, আমাদের এলাকায় আগে বাদামের চাষ খুব একটা হতো না। আলু তোলার পর সিংহভাগ চাষি তিল চাষ করতেন। তবে তিল চাষে ঝামেলা বেশি। বেশি বৃষ্টি হলে গাছ মরে যায়। আবার তিল আদায় করাও বেশ ঝক্কির ব্যাপার। লাভও কম। সেই তুলনায় বাদামে ঝক্কি অনেক কম। লাভ বেশি। তাছাড়া এখন উন্নত মেশিন বেরিয়ে গিয়েছে। জমি থেকেই বাদাম তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছে। বাইরে কোথাও বিক্রিও করতে যেতে হচ্ছে না। সেজন্য অনেকেই এখন তিল ছেড়ে বাদাম চাষে ঝুঁকছেন।

    বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সহ সভাপতি পেশায় চাষি দেবনাথ বাউরি বলেন, বর্তমানে হপার মেশিনে করে খুব সহজেই গাছ থেকে বাদাম পৃথক করা যায়। আবহাওয়া খারাপ হলে তিলে অনেক সময় লোকসান হয়। সেই জন্য প্রতিবছর চাষিদের বাদামের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে। গাছ ও বাদাম পৃথক করার জন্য আমার নিজস্ব হপার মেশিন রয়েছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)