• বাবার তেলেভাজার দোকান, মাধ্যমিকে ৬৭৫ পেয়ে তাক লাগাল নলহাটির রূপম
    বর্তমান | ০৪ মে ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: বাবা তেলেভাজা-মুড়ির দোকান চালান। চারজনের সংসারে সম্বল বলতে ওই দোকানটি। নিত্য অভাবকে সঙ্গী করে এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬৭৫নম্বর পেয়েছে নলহাটি ভবানন্দপুর হাইস্কুলের ছাত্র রূপম সাহা। সমস্ত বিষয়ে লেটার মার্কস পেয়ে স্কুলের মধ্যে প্রথম হয়ে সে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সে সায়েন্স নিয়ে পড়তে চায়। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাবিয়ে তুলেছে তাকে। বাবা মন্টু সাহা অবশ্য বলছেন, কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিলে এভাবেই কষ্ট করে ছেলের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাব।

    ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া নলহাটি থানার প্রত্যন্ত কাঁদাসিন গ্রামে বসবাস মন্টু ও রূপালি সাহার। দুই ভাইবোনের মধ্যে ছোট রূপম। লাগোয়া গোরবাজুলি গ্রামে ছোট তেলেভাজার দোকান চালান বাবা মন্টুবাবু। একদিকে সংসার চালানো, তার উপর ছেলেদের পড়াশোনার খরচ। দিশেহারা অবস্থা হয় মন্টুর। আর্থিক সমস্যার কারণে মেয়েকে বেশিদূর পড়াতে পারেননি। ছোট ছেলেকে নিয়েই স্বপ্ন দেখতে থাকেন ওই দম্পত্তি। আর্থিক অনটনের মধ্যেও ছোট ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করে তুলতে দোকানে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে চলেছেন মন্টু। বাবার কষ্ট দেখে মাঝেমধ্যে দোকানেও বসতে হয় রূপমকে। সেইসঙ্গে দিনরাত এক করে পড়াশোনায় মন দেয়। সাফল্যও এসেছে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় সে বাংলা ও ইতিহাসে ৯৭নম্বর করে, ইংরেজিতে ৯৩, অঙ্কে ৯৮, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৫, জীবনবিজ্ঞানে ৯৬ ও ভূগোলে ৯৯ পেয়েছে। বাবা মন্টুবাবু বলেন, অভাবের সংসার। ছোট দোকানের উপরই রোজগার। খুব কষ্ট করে ছেলেকে পড়াচ্ছি। ছেলে ভালো রেজাল্ট করেছে। কিন্তু পরবর্তী পড়াশোনার খরচ কীভাবে জোগাড় করব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। ছাত্রের মা রূপালিদেবী বলেন, ছোট থেকেই পড়ার জন্য ছেলেকে বলতে হয়নি। নিত্যদিন সাইকেল চালিয়ে চার কিলোমিটার দূরে ভবানন্দপুর হাইস্কুল যেত। বিকেলে বাড়ি ফিরে নিজের যখন ইচ্ছে হতো পড়তে বসত। আর্থিক কারণে ছেলেকে বিষয়ভিত্তিক গৃহশিক্ষক দিতে পারিনি। স্কুলের শিক্ষকরাও খুব সাহায্য করেছেন। কিন্তু উঁচু ক্লাসে কীভাবে ছেলের পড়ার খরচ সামলাব সেই দুশ্চিন্তায় ভুগছি। রূপম  জানায়, স্কুলের শিক্ষক সহ সকলে সহযোগিতা না করলে এই সাফল্য আসত না। আর একটু ফল ভালো হতো। গ্রামের ইন্টারনেট পরিষেবা ভালো না হওয়ায় অনলাইনে পড়াশোনা বা নোট ফলো করা যায়নি। সে বলে, স্কলারশিপের টাকা খুবই কাজে লেগেছে। এইভাবে সকলের সাহায্যে এগিয়ে যেতে চাই। আর্থিক অসুবিধা রয়েছে। আগামী দিনে কী হবে সেসব নিয়ে ভাবিনি। আট কিলোমিটার দূরের নলহাটি হরিপ্রসাদ হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হব। কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে ভালো হয়। সেইসঙ্গে গ্রামের ইন্টারনেট পরিষেবা উন্নত করার দাবি তুলেছে ওই মেধাবী ছাত্র। স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক তথা নলহাটি-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আসাদুজ্জামান বলেন, রূপম দুঃস্থ পরিবারের ছেলে। অধ্যবসার জোরে সে এই সাফল্য পেয়েছে। এই এলাকার সমস্ত স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পিছনে ফেলে সে এগিয়ে গিয়েছে। ওর সুবিধা, অসুবিধায় পাশে থাকব।
  • Link to this news (বর্তমান)