• ওষুধের দোকানের কর্মচারীর ছেলে মাধ্যমিকে পেল ৬৭৮, ফল বিক্রেতার মেয়ের নম্বর ৬৭৬
    বর্তমান | ০৪ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: কোর্ট বাজারে ফল বিক্রি করেন মহম্মদ ফকরুদ্দিন। আসানসোলের শের তলাবের এই সংখ্যালঘু পরিবারের মাতৃভাষা উর্দু। স্ত্রী অনওয়ারি খাতুন নিরক্ষর। ফল বিক্রেতাও কোনওদিন স্কুলের চৌকাঠ পেরোননি। তাঁদের মেয়ে মাহিরা খাতুনই মাধ্যমিকে আসানসোল মহকুমায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৭৬। আসানসোলের অন্যতম বড় স্কুল ধাদকা এন সি লাহিড়ি হাইস্কুলের টপার সে। স্কুলের শিক্ষকদের দাবি, নিজের পরিবারের মাতৃভাষা উদু হলেও মাহিরা পড়েছে বাংলা মাধ্যমেই। 

    মাহিরার লড়াই যথেষ্ট কঠিন ছিল। ফল বিক্রেতা বাবা, তার উপর দশ ভাই বোন। অভাব নিত্যসঙ্গী। তার পরিবার কখন মাথা গুঁজেছে টিনের চালের তলায় কখনও আবার ভাড়াবাড়িতে। অভাবের সংসার, তবু অনওয়ারি খাতুন ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার শপথ নেন। তাঁর জেদেই কার্যত দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে লেখাপড়া চালিয়ে যায় সন্তানরা। মাহিরার দাদা, দিদিরা উর্দু মাধ্যমেই পড়েছে। পরিবারের ষষ্ঠ সন্তান মাহিরাকে বাংলা মাধ্যমে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় মা। অনওয়ারি দেবী বলেন, বাংলার মাটি আমার সন্তানদের শিক্ষিত করছে, অথচ বাংলা ভাষাকেই আপন করব না! সেই ভাবনা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম একটা মেয়ে অন্তত বাংলায় পড়াশোনা করুক। স্কুলের শিক্ষকদের দাবি, মাহিরা শুধু পড়াশোনায় ভালো নয়, বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, ক্যুইজেও পটু। এবার মাধ্যমিকে সে বাংলায় ৯৯, ইংরেজিতে ৯২, অঙ্কে ৯৫, পদার্থ বিজ্ঞানে ৯৮, জীবন বিজ্ঞানে ৯৮, ইতিহাসে ৯৮ ও ভূগোলে ৯৬ নম্বর পেয়েছে। অভাবকে জয় করেই সম্প্রতি তার দুই দাদা মহম্মদ ‌ইরসাদ ও মহম্মদ ইমরান কেন্দ্রীয় সরকারে কাজ পেয়েছে। ধীরে ধীরে সংসারে অভাব কাটছে। শিক্ষার আলোয় ঘুরে দাঁড়ানো এই পরিবার থেকে আইএএস অফিসার হতে চায় মাহিরা। তার আগে দাদাদের পরামর্শে তাঁর প্রাথমিক লক্ষ্য উচ্চ মাধ্যমিকের পর বিটেক করা। অভাব, অনটন জয় করার গল্প রয়েছে রাজদীপ পাত্ররও। আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনের পড়ুয়া ৬৭৮ নম্বর পেয়ে জেলার পঞ্চম। রাজদীপের বাবা রাজেশ পাত্র আসানসোল জেলা হাসপাতালের সামনে এক ওষুধের দোকানের কর্মচারী, মা গৃহবধূ। প্রথম শ্রেণি থেকে মিশনের স্কুলের ছাত্র সে। বাড়ি আসানসোল উত্তর থানার কাল্লা এলাকায়। ওষুধের দোকানে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেই ছেলেকে মানুষ করেছেন রাজেশবাবু। কিন্তু এবার কী হবে? জানা গিয়েছে, রাজদীপের আত্মীয় পরিজনরা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। মেধাবী ছাত্র বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায়। নিজের মেধার জোরে রাজস্থানের কোটায় কোচিং সেন্টারে ভর্তির জন্য স্কলারশিপ জোগাড় করে। বাকি টাকা আত্মীয়রা দিয়ে তাকে সেখানে পাঠিয়েছে। রাজেশবাবু বলেন, ছেলে স্কুলে প্রথম স্থান অধিকার করত। এবার ওর বাংলায় নম্বর কমে যাওয়ায় কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)