বেহাল ঘাটে স্নানে নেমে মৃত্যুর ঘটনা নবদ্বীপ ও মায়াপুরে, অব্যবস্থায় ক্ষোভ
বর্তমান | ০৪ মে ২০২৫
সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: বৈষ্ণবতীর্থ নবদ্বীপ ও মায়াপুরে সারা বছর ধরেই আসেন দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক। পুণ্যলাভে অনেকে স্নানও করেন। অথচ স্নানের ঘাটগুলিতে পর্যাপ্ত নজরদারি এবং রক্ষণাবেক্ষণ হয় না বলে অভিযোগ। স্নানের ঘাটগুলির চরম অব্যবস্থার কারণে গঙ্গাস্নান করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই জলে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।
সম্প্রতি নবদ্বীপ ও মায়াপুরে গঙ্গাস্নান করতে গিয়ে জলে ডুবে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্কিত নবদ্বীপবাসী। দাবি উঠেছে, প্রয়োজনে নিরাপত্তার কারণে ঘাটগুলিতে ব্যারিকেডের ব্যবস্থা করা হোক। পাশাপাশি নির্দিষ্ট জায়গা চিহ্নিত করা হোক, যে পর্যন্ত জলে নিরাপদে স্নান করতে পারেন সকলেই। এছাড়া নবদ্বীপের মধ্যেই বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মী রাখার দাবি উঠছে। সতর্ক ও নজরদারি চালাতে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীদের ২৪ ঘণ্টার জন্য ডিউটি দেওয়া হোক, তাহলে দুর্ঘটনার কবলে পড়লে তড়িঘড়ি সেই সব মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ১৯ কিলোমিটার দূরের কৃষ্ণনগরের জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর। সেখান থেকে উদ্ধারকারী দল নবদ্বীপে আসতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। ততক্ষণে জলে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তি স্রোতের টানে অনেক দূরে চলে যান। বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর এসে ডুবুরি নামিয়েও সেখানে থেকে খুঁজে পায় না। অনেক দূরে যখনও উদ্ধার হয়, তখন তাঁকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর নদী তীরবর্তী স্থানীয় যুবকদের এই কাজের সঙ্গে যুক্ত করলে প্রাণহানির ঘটনা রোখা যেত। এছাড়া সাবধানতা মূলক পোস্টার এবং বয়া ও দড়ি রাখার ব্যবস্থা করা উচিত।
সম্প্রতি নবদ্বীপ শ্রীবাস অঙ্গন ঘাট এবং মায়াপুরের প্রভুপাদ ঘাটে স্নান করতে গিয়ে তিন জনের জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে। গত ২৮ এপ্রিল প্রভুপাদ ঘাটে স্নান করতে নেমে মৃত্যু হয়েছিল বছর পঁচিশের মহারাষ্ট্রের এক যুবকের। গত বৃহস্পতিবার নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থেকে নবদ্বীপ শ্রীবাস অঙ্গন ঘাটে স্নান করতে নেমে নিখোঁজ হয়ে যায় দুই ভাই। গত মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত গঙ্গায় পাঁচ বছরের এক শিশু, এক যুবতী এবং এক ব্যক্তির বিভিন্ন কারণে জলে পড়ে যাওয়ার পর এই তিনজনের দেহ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায় নি।
উল্লেখ্য, নবদ্বীপ হেরিটেজ স্বীকৃত ঘাটগুলির মধ্যে শ্রীবাস অঙ্গন ঘাট, বড়ালঘাট, ফাঁসিতলা, রানিরঘাট, দণ্ডপাণিতলা ঘাট সহ বেশ কিছু ঘাটে সংস্কার করা হয়েছে। শ্রীবাস অঙ্গন চড়া দই পট্টির বাসিন্দা মিঠু রায় বলেন, শ্রীবাস অঙ্গন স্নানঘাটের এখন জল কমে গিয়েছে। ফলে জলে নামতে গেলে সিঁড়ি থেকে নেমে বালির বস্তা তার পিছনে গভীর গর্ত। যারা বাইরে থেকে স্নান করতে আসছেন, তাঁরা ঘাটে নামছেন হাঁটু জলে অথচ আরেকটু এগলেই গভীর জলে পড়ে যান।
এপ্রসঙ্গে নবদ্বীপ পুরসভার চেয়ারম্যান বিমানকৃষ্ণ সাহা বলেন, ঘাটগুলো রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে। কিন্তু জলের তীব্র গতির কারণে বালির বস্তা সরে গিয়েছে। কেএমডিএ-কে বলা হয়েছে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে ঘাটগুলি সংস্কার করতে হবে। নবদ্বীপের ১০টি স্নানের ঘাটের প্রতিটি ঘাটে দু’দিকে পিলার করে শিকল দিয়ে দেওয়া হবে। যাতে সেই শিকল ধরে মানুষ জলে নেমে স্নান করতে পারেন। এমনকী নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে উন্নতমানের নেট দিয়ে চারিদিক ঘিরে দেওয়া হবে। কেউ যদি জলে ভেসে যায়, তবুও পিলারে আটকে যাবে।