• প্রায় ৫০ বছর পর সংস্কার হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী মতিঝিলের
    বর্তমান | ০৪ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: নামেই ঝিল। তবে তাতে জলের অস্তিত্ব নেই। ঝিলের দুই পাড় বুজিয়ে তৈরি হয়েছে অসংখ্য ফ্ল্যাট। হাওড়া শহরে ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় দেড় কিমি দীর্ঘ মতিঝিল এখন যেন বড়সড় একটি ভ্যাট। গত ৫০ বছর ধরে এই ঝিলের সংস্কার হয়নি। অবশেষে এই মতিঝিলকে তার আগের চেহারায় ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী হল হাওড়া পুরসভা। এলাকাটি ঘিঞ্জি হওয়ায় ঝিল পরিষ্কারের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে অত্যাধুনিক মেশিন। পাশাপাশি ওই এলাকাতেই তৈরি হচ্ছে একটি পাম্প হাউস। ফলে আগামী বর্ষায় শহরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড জল জমার সমস্যা থেকে চিরতরে রেহাই পেতে চলেছে বলে দাবি পুরসভার।

    কলকাতার আর জি কর হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ডাঃ রাধাগোবিন্দ কর। মতিঝিল এই কর পরিবারের সম্পত্তি। এক সময় কলাবাগান লেন থেকে মালিকপাড়া পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ এই ঝিলে রীতিমতো নৌকা চলত। জাল ফেলে মাছ ধরতেন মৎস্যজীবীরা। আশপাশের ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ ঝিলের জলে বাসন ধোয়া থেকে কাপড় কাচা— সবই করতেন। ৪২ ও ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাশির সবথেকে বড় ভরসা ছিল এই মতিঝিল। জানা গিয়েছে, ২০০৫ সাল নাগাদ এই ঝিলে মাছ চাষ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর একটু একটু করে দু’পাশের পাড় বুজিয়ে তৈরি হয় বাড়িঘর। দু’পাশের বসতি এলাকা থেকে আবর্জনাও এসে জমতে থাকে ঝিলে। ফলে বিরাট আয়তনের মতিঝিল পরিণত হয় আস্তাকুঁড়ে। প্রতি বর্ষায় একদিকে যেমন জল জমার সমস্যা, তেমনই ডেঙ্গুর আতঙ্কে রীতিমতো সিঁটিয়ে থাকেন বাসিন্দারা। এলাকার মানুষ এই ঝিল পরিষ্কারের জন্য বারে বারে হাওড়া পুরসভার কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কলাবাগান লেনের সরু ঘিঞ্জি গলি দিয়ে মতিঝিল পর্যন্ত মেশিনপত্র নিয়ে যাওয়াই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল পুরসভার। অবশেষে সেই কাজ শুরু হয়েছে।

    হাওড়া পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ডাঃ সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘গত বছরই মতিঝিল সাফাই করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বরাত পাওয়া এজেন্সি ও পুরসভার ইঞ্জিনিয়াররা বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে ঝিল সংস্কারের কাজ করছেন। আগামী দেড় মাসের মধ্যে এই কাজ শেষ করা হবে। কয়েকটি ওয়ার্ডে জল জমার সমস্যা পুরোপুরি মিটতে চলেছে।’ মতিঝিল সংস্কারের পাশাপাশি ওই এলাকায় একটি পাম্প হাউস তৈরির কাজ চলছে জোরকদমে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এই ঝিলটি কলাবাগান লেন, শাস্ত্রী নরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি রোড, মহেন্দ্র ভট্টাচার্য রোড সহ শৈলেন মান্না সরণি ও বেলেপোল এলাকার একমাত্র নিকাশি পথ। গত বছর বর্ষায় ইছাপুর ও ডুমুরজলার বাসিন্দাদের রীতিমতো বানভাসি অবস্থা হয়েছিল। ঝিল সংস্কার হলে এবার সেই ভোগান্তি আর ভোগ করতে হবে না। মতিঝিলকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার পর কেউ যাতে সেখানে আবর্জনা না ফেলেন, সে ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতন করা হচ্ছে।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)