বাবা টোটো চালান। দিনভর পরিশ্রম করে যে উপার্জন হয়, তাতে কোনওমতে সংসার চলে। টালির চাল। কাঁচা-পাকা বাড়িটাতে ঠিকমতো আলো ঢোকে না। সেখানেই মাদুর পেতে মেয়ে ডুবে থাকে বইয়ের দুনিয়ায়। স্বপ্ন, ডাক্তার হবে। বদলে দেবে পরিবারের অবস্থা। চিকিৎসা করবে গরিবদের। শনিবার হাই মাদ্রাসা পরীক্ষার ফল বেরোতেই ওই টালির ছাউনি দেওয়া বাড়িতে আনন্দের জোয়ার। হাই মাদ্রাসায় রাজ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে মালদহের টোটোচালকের কন্যা শাহিদা পারভিন। তার সঙ্গে রাজ্যে যে যুগ্ম ভাবে প্রথম হয়েছে, সে-ও মালদহের কন্যা। নাম ফাহমিদা ইয়াসমিন। বস্তুত, হাই মাদ্রাসায় পরীক্ষায় প্রথম ১৫ স্থানাধিকারীর ১২ জনই মালদহের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে ১১ জন ছাত্রী।
শাহিদার বাড়ি মালদহের রতুয়া-১ ব্লকের ভাদো গাম পঞ্চায়েতের ছোটো বটতলা গ্রামে। বাবা সামসুদ্দোহা টোটোচালক। মা সায়েমা বিবি বাড়ির কাজ সামলান। শাহিদার স্বপ্ন, চিকিৎসক হবে। কিন্তু বাদ সেধেছে পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা। তাই পরীক্ষায় ভাল ফল করেও তার আশঙ্কা, স্বপ্ন সত্যি হবে তো? বটতলা আদর্শ মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দেওয়া ছাত্রীটি ছোট থেকে এলাকার একটি আবাসিক গার্লস মিশনে পড়াশোনা করেছে। সে বলে, ‘‘বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করতে চাই। কিন্তু পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কারণে দুশ্চিন্তায় আছি।’’ মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে চিন্তিত টোটোচালক বাবা-ও। তাঁরা চান, সরকার সহযোগিতা করুক।
ফাহমিদা সামসী হাসপাতাল মোড় এলাকার বাসিন্দা। সে-ও ৮০০-র মধ্যে পেয়েছে ৭৮০ নম্বর। ভগবানপুর হাই মাদ্রাসার ছাত্রীটি জানিয়েছে, বড় হয়ে সে ডাক্তার হতে চায়। পরীক্ষায় সাফল্যের কৃতিত্ব শুধু নিজের নয়, পুরো পরিবারের বলে জানিয়েছে মেয়েটি। সে বলে, ‘‘বাড়ির লোকজন থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা, আমার জীবনে সকলের অনেক অবদান। ডাক্তার হয়ে সকলের মুখ উজ্জ্বল করতে চাই।’’
হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছে মালদহের শ্যামসুন নেহার। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৭৬। তৃতীয় হয়েছে মালদহেরই আলিফনুর খাতুন। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৭২। ফেরিওয়ালার মেয়ে আলিফনুরের প্রিয় বিষয় ইতিহাস। যদিও এই মেয়েও স্বপ্ন দেখে চিকিৎসক হওয়ার।