• কলকাতার রুফটপ রেস্তোরাঁ ভাঙার কাজ শুরু পুরসভার
    এই সময় | ০৪ মে ২০২৫
  • এই সময়: মেছুয়া ফলপট্টির হোটেলে আগুন লেগে ১৪ জনের মৃত্যুর পর কলকাতা জুড়ে থাকা বিভিন্ন রুফটপ রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে অভিযানে নেমেছে পুরসভা।

    শুক্রবার দুপুরে ওই অভিযান শুরু হয়েছে। মেছুয়ার ‘হোটেল ঋতুরাজ’–এ অবশ্য রুফটপ রেস্তোরাঁ ছিল না। তবে আগুনে আটকে পড়া অনেকেই ওই হোটেলের ছাদে উঠতে পারেননি, সিঁড়িতে বাধা ছিল। ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়। তার পরেই কলকাতা পুরসভা সিদ্ধান্ত নেয় যে, শহরের সব ক’টা বহুতলের ছাদ খালি করতে হবে।

    তার জন্যই রুফটপ রেস্তোরাঁ–বিরোধী এই অভিযান এবং যাতে কার্যত যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সক্রিয় হয়েছে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ। শনিবার দুপুর থেকে সন্ধে পর্যন্ত পার্ক স্ট্রিট ও সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের দু’টি রেস্তোরাঁ পুরসভা ভাঙার কাজ করেছে। কলকাতা পুলিশের তরফে ৮৩টি রুফটপ রেস্তোরাঁর একটি তালিকা শুক্রবার পাঠানো হয় কলকাতা পুরসভার কাছে।

    ওই রেস্তোরাঁগুলোর কয়েকটিতে আবার পানশালাও রয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, বুধবার রাতেই পুলিশ কমিশনারের কাছে কলকাতার রুফটপ রেস্তোরাঁগুলোর তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। লালবাজারের সেই তালিকা ধরে পুরসভা শনিবার দুপুর থেকে রুফটপ রেস্তোরাঁ–বিরোধী অভিযানের গতি বাড়ায়।

    তবে শহরের বেশ কয়েকটি রুফটপ রেঁস্তোরার মালিকদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাত ৮টা নাগাদ পুরসভার তরফে তাঁদের কাছে একটি নোটিস পাঠানো হয়। তার পর তাঁদের সরে যেতে প্রয়োজনীয় সময় না–দিয়েই শুক্রবার দুপুর থেকে বিভিন্ন রুফটপ রেস্তোরাঁ ভাঙার প্রস্তুতি শুরু করে দেয় পুরসভা। রুফটপ রেস্তোরাঁগুলোর মালিকদের অভিযোগ, পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের লোকজন গ্যাস কাটার ব্যবহার করে সাজানো–গোছানো রেস্তোরাঁ তছনছ করে দিচ্ছেন।

    মেছুয়া ফলপট্টির হোটেলে মঙ্গলবার রাতে আগুন লাগে। দিঘা সফর সেরে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেছুয়া পরিদর্শনে গিয়ে ছিলেন। সেখান থেকে তিনি সোজা চলে যান পার্ক স্ট্রিটে। সেখানে তিনি ছ’টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। তার পরেই কলকাতার বিভিন্ন রুফটপ রেস্তোরাঁগুলো ভাঙার হুঁশিয়ারি দেয় পুরসভা। সূত্রের খবর, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে জানান, শহরের সব ক’টি রুফটপ রেস্তোরাঁ খুব তাড়াতাড়ি ভেঙে ফেলতে হবে।

    সেই মতো পুরসভা একটি নির্দেশিকা বার করে। যা পাঠানো হয় কলকাতার বিভিন্ন হোটেল, রুফটপ রেস্তোরাঁ, ক্যাফে এবং বাড়ির মালিক, ডেভেলপার ও প্রোমোটারদের। ওই নির্দেশিকায় পুরসভা স্পষ্ট জানিয়েছে, ছাদে কোনও রেস্তোরাঁ, ক্যাফে রেখে বাড়ির মিউটেশন করা যাবে না। কোনও বাড়ির প্রত্যেক আবাসিকের জন্য ছাদ খোলা রাখতে হবে এবং খোলা রাখতে হবে ছাদে ওঠা–নামার সিঁড়ি। পুরসভা ওই নির্দেশিকায় জানিয়েছে, প্রত্যেককে মনে রাখতে হবে যে, ছাদ বা ছাদে ওঠার সিঁড়ি কারও একার ব্যবহারের জন্য নয়। ছাদে ওঠা–নামার সিঁড়ির মতো বিল্ডিংয়ের কমন প্যাসেজে কোনও কিছু রেখে সেই জায়গা আটকে রাখা যাবে না।

    তবে রাতারাতি পুরসভার এই অভিযানে স্বভাবতই মাথায় হাত রুফটপ রেস্তোরাঁ মালিকদের। পার্ক স্ট্রিটের এমন একটি রেস্তোরাঁর মালিক বলেন, ‘আমাদের তো লাইসেন্স রয়েছে। ছাদে ওঠা–নামার সিঁড়ি ফাঁকা। লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করাটাও যদি বেআইনি হয়, তা হলে আইনি কোনটা, সেটা আমাদের বলতে হবে।’

    তাঁর বক্তব্য, রুফটপ রেস্তোরাঁগুলোয় যে কর্মীরা কাজ করেন, তাঁরা এ বার কোথায় যাবেন? কী ভাবে তাঁদের রুজি রোজগার হবে? তাঁর কথায়, ‘আমরা আদালতে যাওয়ার সময় টুকু পেলাম না। তার আগেই ভাঙা পড়লাম।তবু সোমবার আমরা আদালতের কাছে আবেদন জানাব।’

    পুরসভার সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ, রবিবার ছুটির দিনেও রুফটপ রেস্তোরাঁ–বিরোধী অভিযান চালাবে বিল্ডিং বিভাগ।

  • Link to this news (এই সময়)