অর্ঘ্য ঘোষ, আমোদপুর
সে দু’শো বছর আগের কথা। জনপদে দেখা দিয়েছিল ভয়ানক প্রাকৃতিক বিপর্যয় (মতান্তরে মহামারী)। তার হাত থেকে বাঁচতে তৎকালীন জমিদার বৈশাখেই জয়দুর্গা পুজোর আয়োজন করেন হাটতলায়। তারপরে সে পুজোয় আর ছেদ পড়েনি, এখনও পড়ে না।
শুক্রবার পুজোর উদ্বোধন হয়েছে বীরভূমের আমোদপুরে। উদ্বোধন করেন বোলপুরের মুলুকের ভারত সেবাশ্রম সংঘের অধ্যক্ষ স্বামী সংঘমিত্রানন্দ। শনিবার ষষ্ঠীর পরে আজ, রবিবার সপ্তমী। পুজো ঘিরে প্রতি বছরের মতোই তোড়জোড় আমোদপুরে।
এক সময়ে ওই তল্লাট ও আশপাশে ছিল আহমেদ উল জুমা খাঁয়ের জমিদারি। তাঁর নামানুসারে জনপদের নাম আহমদপুর, তা থেকে আমোদপুর। খাঁ সাহেবের পরেও সেখানে বহু জমিদার এসেছেন–গিয়েছেন। শেষে এক সময়ে জমিদারি প্রথাটাই উঠে গিয়েছে। থেকে গিয়েছে পুজোটা। আর আছে ‘জয়দুর্গা’র নামাঙ্কিত এলাকার স্কুল, গ্রন্থাগার, ক্লাব–সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বৈশাখ মাসের জাহ্নবী তিথিতে এই পুজো হয়। এ জন্য ‘জাহ্নবী’ বা ‘বৈশাখী’ দুর্গাপুজোও হিসেবেও তা পরিচিত।
শরৎকালে যে অকাল বোধন ঘিরে গোটা রাজ্য মেতে ওঠে, তার সঙ্গে এই বৈশাখী পুজোর আচার-আচরণে বিশেষ ফারাক নেই। পার্থক্য শুধু মূর্তি ও বিসর্জনের পদ্ধতিতে। দশভুজার পরিবর্তে আমোদপুরের জয়দুর্গা মূর্তি মেঘবর্ণা ও চতুর্ভুজা। সিংহবাহিনী প্রতিমার চার হাতে শঙ্খ, চক্র, তির ও ধনুক। ডান পাশে লক্ষ্মী ও জয়া, বাঁ পাশে সরস্বতী ও বিজয়া। পায়ের তলায় মহাদেব, নারায়ণ, ব্রহ্মা এবং ইন্দ্র। মাথার উপরে ললিতা, হনুমান, বিশাখা এবং গরুড়।
চারদিনের পুজোর সমাপ্তি হয় ঘট বিসর্জনের মাধ্যমে। কিন্তু মূর্তি থেকে যায়। ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে’ পুজোর বাদ্যি বেজে ওঠার এক মাস আগে জয়দুর্গা মূর্তি বিসর্জন দেওয়া হয়। এবং সেই কাঠামোতেই তৈরি হয় শরৎকালীন প্রতিমা
এ সব অবশ্য নেহাতই রীতি–রেওয়াজের পার্থক্য। বৈশাখে এলাকাবাসী মেতে ওঠেন সার্বজনীন উৎসবেরই আনন্দে। আইনের ছাত্রী কেয়া মণ্ডল, টেনের পড়ুয়া আবির চৌধুরীদের কথায়, ‘এখানে দুর্গাপুজোর ডবল আনন্দ। বন্ধুবান্ধবদেরও এই সময়ে এখানে আমন্ত্রণ জানাই।’ শরৎকালীন দুর্গাপুজোর মতো জয়দুর্গার পুজোতেও নতুন পোশাক থেকে এলাহি খাওয়াদাওয়া — বাদ যায় না কিছুই।
এখন ওই পুজো পরিচালনা করে স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতি। সমিতির সভাপতি মহাদেব দত্ত, সম্পাদক রাজেন্দ্রনাথ দত্তরা বলেন, ‘শুধু আমোদপুর নয়, আশপাশের বহু গ্রামের মানুষ এই পুজোয় মেতে ওঠেন।’