• কালবৈশাখীর সঙ্গে শিলাবৃষ্টি, ব্যাপক ক্ষতি আম ও ধানের
    এই সময় | ০৪ মে ২০২৫
  • এই সময়: কিছু দিন আগে চ্যালেঞ্জটা ছিল তাপপ্রবাহ থেকে ফসলকে বাঁচানোর। এ পর্যায়ে তাপপ্রবাহ কিন্তু শুরু হতে না–হতেই থেমে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রকৃতির মার থেকে ফসল বাঁচানো যে গেল না এবং সেটা যে সব সময়ে সম্ভবও নয়, এখন তা টের পাচ্ছেন বাংলার, বিশেষত দক্ষিণবঙ্গের চাষিরা।

    কালবৈশাখীর দাপটের পাশাপাশি শিলাবৃষ্টিতে ছারখার হয়ে গিয়েছে বেশ কয়েকটি জেলার মাঠের ফসল। একই সঙ্গে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আম, লিচুর মতো গ্রীষ্মের ফলও। তবে কৃষি বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, এই আবহাওয়ায় তাপপ্রবাহ কিছু দিনের জন্য থমকে যাওয়ায় এ সব ফলের লাভ হবে।

    তাঁদের যুক্তি, প্রচণ্ড তাপে আম ও লিচুর একসঙ্গে পেকে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। সে ক্ষেত্রে এই সব ফলের স্থায়িত্ব অনেক কম হতো। তবে এ রকম শাপে বর হয়নি ধান-পাট-তিল এবং গ্রীষ্মকালীন আনাজে। সে সবের ব্যাপক ক্ষতিই হয়েছে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে।

    গত দু’সপ্তাহে দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হুগলি, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ এবং গোটা রাঢ়বঙ্গে বেশ কয়েক বার কালবৈশাখী হয়েছে। তার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার, ১ মে প্রবল ঝড়ে দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি ও নদিয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে চাষের। ওই জেলাগুলোয় ধান, পাট, তিল এবং আনাজের খেত উজাড় হয়ে গিয়েছে শিলাবৃষ্টিতে।

    হুগলির পোলবার আমনান গ্রাম পঞ্চায়েতের বীরেন্দ্রনগর, ডাকাতিয়া ভেড়ি, নতুন ভেড়ি ও ডুবির ভেড়ি, হারিট গ্রাম পঞ্চায়েতের পয়ান প্রেমনগর ও মথুরপুরে ফসলের মাঠে পরিণত ধানগাছ কার্যত শুয়ে পড়েছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন। উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়া, মিনাখাঁ, বসিরহাট ও দেগঙ্গা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়, নদিয়ার চাপড়া, তেহট্ট, বেথুয়াডহরি-সহ বিভিন্ন এলাকায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ধানগাছ জমিতে নুইয়ে পড়েছে।

    প্রবল বৃষ্টিতে জল জমেছে ফসলের মাঠে। যার ফলে ধানগাছ ডুবে গিয়েছে জলে। শিলাবৃষ্টিতে ধানগাছের শীষ ভেঙে পড়েছে। চাষিদের বক্তব্য, প্রায় পরিণত ধানগাছ একবার গোড়া থেকে নুইয়ে পড়লে আর ফলন পাওয়া যাবে না। জলে ডুবে যাওয়ার কারণেও ধানগাছ নষ্ট হবে বলে তাঁদের আশঙ্কা।

    উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার চাষি সামসুল ইসলাম বলেন, ‘ধান চাষ করেছিলাম ১৯ বিঘে জমিতে। ঝড় আর শিলাবৃষ্টিতে ধানগাছ জমিতে শুয়ে পড়েছে। শিলার ঘায়ে ধানের শীষ ভেঙে গিয়েছে। সেই গাছ থেকে ধান আর পাওয়া যাবে না।’

    ধান চাড়াও বিঘের পর বিঘে জমিতে তিল ও পাট গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নদিয়ার বেথুয়াডহরির চাষি শ্যামল প্রতিহারের কথায়, ‘এ বার ৯ বিঘে জমিতে তিল চাষ করেছিলাম। তা ছাড়া ছিল ঝিঙে, শসা, বেগুনও। শিলাবৃষ্টিতে বেশির ভাগ গাছই নষ্ট হয়েছে। এখনই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় তিন লক্ষ টাকা। কী হবে, জানি না।’

    নদিয়ার শান্তিপুরে আম–লিচুর বাগান রয়েছে জগন্নাথ বিশ্বাসের। তাঁর কথায়, ‘ঝড়ে যা পড়ার, তা তো পড়েইছে। তা–ও যত আম ও লিচু গাছে ছিল, সেগুলো সব নষ্ট হয়েছে শিল পড়ে।’

    ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা কৃষি দপ্তরের যোগাযোগ করেছেন। তবে এখনও সেখান থেকে কোনও আশার খবর আসেনি বলে চাষিদের বক্তব্য।

  • Link to this news (এই সময়)