অরূপকুমার পাল, ঝাড়গ্রাম
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্রী দীপিকা পালকে এক সময়ে দেখে নেওয়ারও ‘হুমকি’ দিয়েছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। তাতে পিছু হটেননি দীপিকার বাবা-মা। তবে বাবার ভয় হয়েছিল, মেয়ের কিছু ক্ষতি করবেন না তো ওঁরা? হার মানেননি বাবা-মা। মাধ্যমিক পাশ করে বাবা–মায়ের সেই জেদেরই এ বার প্রতিদান দিল তাঁদের মেয়ে দীপিকা।
২০২০ সাল থেকে ‘অটিস্টিক’ এই ছাত্রী দীপিকা পালের লড়াইয়ের পাশে ছিল ‘এই সময়’। মেয়ে মাধ্যমিক পাশ করায় পুরাতন ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা দীপিকার বাবা মৃত্যুঞ্জয় পাল ধন্যবাদ জানালেন ‘এই সময়’কে।
পাঁচ বছর আগে অটিজ়মে আক্রান্ত দীপিকাকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি নিতে চায়নি ঝাড়গ্রামের শ্রীরামকৃষ্ণ সারদাপীঠ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। যদিও দীপিকা ওই স্কুলের প্রাথমিক সরকারি স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিল। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি না নেওয়ার অভিযোগ তুলে তৎকালীন জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ছাত্রীর বাবা। ‘শিক্ষার অধিকার আইন-২০০৯’–কে অমান্য করার অভিযোগ উঠেছিল স্কুলের বিরুদ্ধে।
এই সংবাদপত্রে খবরটি প্রকাশিত হতেই শোরগোল পড়ে যায় সর্বস্তরে। ‘অমানবিক’ আচরণের বিরুদ্ধে কার্যত সকলেই স্কুল কর্তৃপক্ষকে কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। শেষমেশ চাপে পড়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালের ৭ ফ্রেবুয়ারি ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করেন। এরপর ঝামেলা বাধে অষ্টম থেকে নবম শ্রেণিতে ওঠার সময়ে।
দীপিকার বাবা মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েকে প্রতি ক্লাসে উঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নবম শ্রেণিতে আর ওঠাতে চাননি মেয়েকে। চাপের মুখে ভর্তির দু’দিন পরে আমাকে ডেকে পাঠিয়ে প্রধান শিক্ষিকা বলেন, নবমে উঠিয়ে তো দিলাম। এরপর দেখব কী ভাবে আপনার মেয়ে পাশ করে? আর সময় নষ্ট না করে কয়েক দিনের মধ্যে বাড়ি থেকে প্রায় দশ কিমি দূরে ঝাড়গ্রাম বিকাশ ভারতী শিক্ষায়তনে ভর্তি করি মেয়েকে। ওখানকার টিচাররা ওকে খুবই সাহায্য করেন।’
মৃত্যুঞ্জয় পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, মা সুতপা গৃহবধূ। বাড়িতে দীপিকার এক বোন ও এক ভাই আছে। মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘আমি চাই, অটিস্টিক কোনও পড়ুয়াকে বা তার বাবা-মাকে যেন কোনও স্কুল হেনস্থা না করে।’ ঝাড়গ্রাম বিকাশ ভারতী শিক্ষায়তনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অতনু মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ওকে বিশেষ ভাবে গাইড করার চেষ্টা করেছেন। ও পাশ করেছে, এটা খুবই আনন্দের।’