মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বেরোনোর পরে ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। এরই মধ্যে শনিবার ভোরে বাড়ির সামনে থাকা আম গাছের নীচে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের হাড় ভাঙা অবস্থায় উদ্ধার হল তিনটি বিষয়ে লেটার নম্বর পেয়ে পাশ করা এক পড়ুয়ার দেহ। তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা ওই ছাত্রকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
রহড়ার পাতুলিয়ার ঘটনা। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ছাত্রের নাম সাগর চৌধুরী (১৬)। তার এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা খুন না কি আত্মহত্যা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ব্যারাকপুর সিটি পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ জানা যাচ্ছে, ওই কিশোরের ঘাড়, কোমর ও হাত-পায়ের হাড় ভাঙা ছিল।
পাতুলিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা শম্ভু চৌধুরীর ছেলে সাগর। পাতুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই ছাত্র মাধ্যমিকে ভাল ফল করায় আনন্দেই ছিলেন পরিবারের লোকজন। এ দিন শম্ভু জানান, ভোর ৪টে নাগাদ শৌচাগারে যাওয়ার জন্য তিনি ঘর থেকে বেরোন। তখনই বাড়ি থেকে দু’-তিন ফুট দূরের আম গাছের নীচ থেকে গোঙানির আওয়াজ শোনেন তিনি। তড়িঘড়ি ডেকে আনেন স্ত্রীকে। দু’জনে গাছের নীচে গিয়ে দেখেন, সেখানে আধশোয়া অবস্থায় পড়ে গোঙাচ্ছে সাগর। ওই দম্পতির চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে সাগরকে উদ্ধার করে প্রথমে বন্দিপুর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু তত ক্ষণে ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। এর পরে ফুলবাগান থানা দেহটি ময়না তদন্তে পাঠায়। শম্ভু বলেন, ‘‘ও ভাল রেজাল্ট করায় খুব আনন্দ হয়েছিল। কী ভাবে কী হল, বুঝতে পারছি না।’’
অন্য দিকে, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় রহড়া থানার পুলিশ। সূত্রের খবর, গাছের গোড়ায় যেখানে সাগর পড়ে ছিল, সেখানে দু’-তিন ফুটের গর্ত তৈরি হয়েছে। পাশেই আম গাছের একটি ডালও ভেঙে পড়ে থাকতে দেখা যায়। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, উঁচু জায়গা থেকে পড়ে গিয়ে থাকতে পারে সাগর। গাছের সব চেয়ে উঁচু ডাল থেকে মাটির দূরত্ব কতটা, তা-ও এ দিন মেপে দেখেন তদন্তকারীরা। কিন্তু তাতে সন্তোষজনক তথ্য মেলেনি বলেই খবর। কারণ, গাছের উচ্চতা থেকে পড়ে গেলে মাটিতে এমন গর্ত হওয়ার কথা নয়। পুলিশের অনুমান, গাছ সংলগ্ন মোবাইল টাওয়ার থেকেও পড়ে গিয়ে থাকতে পারে সাগর। তাতেই এমন ভাবে হাড় ভেঙে থাকতে পারে ও মাটিতে গর্ত হতে পারে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে গাছ বা সিঁড়ি বেয়ে টাওয়ারে কেন উঠবে ওই কিশোর, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বাড়ির একটি ঘরে থাকেন শম্ভু ও তাঁর স্ত্রী। শুক্রবার রাতে আম গাছের দিকের অন্য একটি ঘরে ছিল সাগর। পড়াশোনার জন্য সে ওই ঘরে একাই থাকত। তার জেঠিমা সীতা চৌধুরী বলেন, ‘‘সাগর সারা দিন বাড়িতেই থাকত। বাইরে খুব একটা বেরোত না। বন্ধুরা এলেও ওই ঘরে বসেই কথা বলত। মনে হচ্ছে, কেউ ওকে বাইরে ডেকে খুন করেছে।’’ যদিও পরিবারের তরফে এ বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।
তদন্তকারীদের অনুমান, রাতে সাগর বাইরে বেরিয়ে গেলেও তার বাবা-মা টের পাননি। সূত্রের খবর, ওই ছাত্রের এক বন্ধু পুলিশকে জানিয়েছে, ফোনে সাগর জানিয়েছিল, আরও ভাল ফল হবে ভেবেছিল সে। যদিও সাগরের মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা লক্ষ করেননি বলেই দাবি পরিজনদের। এ দিন তার মা কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘‘ছেলে বলেছিল, এমন রেজাল্ট করব যে, মিডিয়া আসবে। সত্যি মিডিয়া এল, কিন্তু ছেলেটাই আর নেই।’’