সূর্যকান্ত কুমার, কালনা
বিরল জিনঘটিত রোগ স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রফিতে (এসএমএ) আক্রান্ত কালনার পূর্বস্থলী পাটুলির আড়াই বছরের শিশু আয়ুষ বর্ধন। ঠিক একই রোগে আক্রান্ত রানাঘাটের ছোট্ট মেয়ে অস্মিকা দাসও। তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ইঞ্জেকশনের দাম প্রায় ১৬ কোটি টাকা। বিভিন্ন সহৃদয় ব্যক্তি ও সংস্থা এগিয়ে আসায় সেই টাকা অনেকটাই জোগাড় হয়ে গিয়েছে। আয়ুষের চিকিৎসার জন্যও একই ধরনের ইঞ্জেকশন লাগবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
কিন্তু এত টাকা কী ভাবে জোগাড় হবে, তা ভেবেই রাতের ঘুম ছুটেছে কোনওরকমে সংসার চলা আয়ুষের পরিবারের লোকজনের। ইতিমধ্যে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার–সহ বিভিন্ন জায়গায় আবেদন জানালেও প্রয়োজনীয় টাকা শেষ পর্যন্ত আদৌ জোগাড় হবে কি না, তা নিয়ে অন্ধকারেই রয়েছেন পরিবার সদস্যরা।
পূর্বস্থলীর পাটুলির তহবাজার এলাকায় বাড়ি আয়ুষের। বাবা প্রশান্ত বর্ধন ভিডিওগ্রাফির কাজ করে সামান্য রোজগার করেন। মা সিন্থিয়া বর্ধন গৃহবধূ। শনিবার ছেলের প্রসঙ্গে প্রশান্ত বলছিলেন, ‘ওর যখন পাঁচ মাস বয়স, তখন বুঝতে পারি কোথাও একটা সমস্যা রয়েছে। নিজে পা তুলতে পারত না। কলকাতার চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম, তিনিও বুঝতে পারেননি। বলেছিলেন ভয়ের কিছু নেই। ছ’মাস দেখুন, ঠিক হয়ে যাবে। ছ’মাস পরে দেখি, ছেলে হাতও তুলতে পারছে না।’
এর পরে আর দেরি না–করে ছেলেকে নিয়ে প্রশান্ত গিয়েছিলেন ভেলোরের সিএমসি–তে। সেখানেই ধরা পড়ে, ছোট্ট ছেলে বিরল জিনঘটিত রোগ স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রফিতে আক্রান্ত। এর জন্য জিন থেরাপি প্রয়োজন। তার জন্য প্রয়োজন জোলজেন্সমা ইঞ্জেকশনের। কিন্তু তার দাম প্রায় ১৬ কোটি টাকা। এ ইঞ্জেকশন ভারতে পাওয়া যায় না। বিদেশ থেকে আনাতে হয়।
বিপন্ন প্রশান্তের প্রশ্ন, ‘আমার সামান্য রোজগার। এত টাকা কী ভাবে জোগাড় করব, ভেবেই রাতে ঘুম আসে না। বিভিন্ন জায়গায় অর্থের জন্য আবেদন জানিয়েছি। পিজির রেয়ার ডিজ়িজ কমিটির বোর্ডেও গিয়েছি সমস্ত নথি নিয়ে। কেন্দ্রীয় সরকারের ক্রাউড ফান্ডিং প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্তির আবেদন জানিয়েছি। স্বাস্থ্য দপ্তর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের কাছেও লিখিত আর্জি জানিয়েছি।’
মা সিন্থিয়া বর্ধন বলছিলেন, ‘পাটুলি হাইস্কুল ও কিছু পরিচিত মানুষ আর্থিক সাহায্য করেছেন। কিন্তু চিকিৎসার জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন। অস্মিকার পাশে সকলে দাঁড়ানোয় সেই অর্থ জোগাড় সম্ভব হয়েছে। আমারও আর্জি, এ ভাবেই আমার ছেলের পাশেও সকলে দাঁড়ান। তা হলে হয়তো আড়াই বছরের আয়ুষকে সুস্থ করে তুলতে পারব।’