দিব্যেন্দু সিনহা, জলপাইগুড়ি
মেয়ে স্কুলে যাবে। টিফিন, জলের বোতল ব্যাগে দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন মা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধে। মেয়ের দেখা নেই। খোঁজ খোঁজ, পরে জানা গেল, বয়ফ্রেন্ডের হাত ধরে ঘর ছেড়েছে সে। শুধু স্কুলের পথে নয়, টিউশন পড়তে যাওয়ার নাম করে, আবার কখনও বান্ধবীর বাড়ি যাওয়ার নামে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা বেড়েছে জলপাইগুড়িতে। জেলা চাইল্ড প্রোটেকশন কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৪-২৫ সালে নথিভুক্ত চাইল্ড ম্যারেজের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৩। আগের বছর এই সংখ্য ছিল ৪০। তবে এই প্রবণতা বেশি গ্রামাঞ্চলে। তথ্যে উঠে এসেছে, জলপাইগুড়ি সদর ব্লকে ৪৫, ময়নাগুড়ি ব্লকে ৩৪ এবং ধূপগুড়ি ব্লকে ১২ জন স্কুল পড়ুয়া কখনও পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে, কখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয়ের সূত্রে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছে প্রেমিকের হাত ধরে। তাদের কেউ অত্যাচারের শিকার হয়ে এক-দু'বছরের মাথায় বাড়িও ফিরে এসেছে।
চাইল্ড ম্যারেজ বন্ধ করতে স্কুলে কাউন্সেলিং করার পরেও কেন সচেতন হচ্ছে না পড়ুয়ারা, চিন্তায় চাইল্ড প্রোটেকশন কমিটির সদস্যরা। বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে এ বার নাবালিকার বাবা-মাকেও কাউন্সেলিং করার চিন্তাভাবনা করেছেন আধিকারিকরা। জেলা চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসার সুদীপ ভদ্র বলেন, 'গত এক বছরে ১৬৩টি চাইল্ড ম্যারেজের মধ্যে অধিকাংশই পালিয়ে বিয়ের ঘটনা। কয়েক জনের ক্ষেত্রে বাড়ি থেকে জোর করে বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদিও তার সংখ্যা ২-৩ শতাংশ। আমরা ১২০ জনকে উদ্ধার করে হোমে পাঠিয়েছি। তাদের কাউন্সেলিং করে জানা গিয়েছে, নাবালক-নাবালিকাদের অধিকাংশের প্রেম হয়েছে মোবাইলের মাধ্যমে। যেহেতু ছেলেরা স্কুলছুট এবং কম বয়সে কাজে যুক্ত হচ্ছে, তার পরেই প্রেমিকাকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করছে। পরিবারিক কারণও এর জন্য দায়ী।
করে বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদিও তার সংখ্যা ২-৩ শতাংশ। আমরা ১২০ জনকে উদ্ধার করে হোমে পাঠিয়েছি। তাদের কাউন্সেলিং করে জানা গিয়েছে, নাবালক-নাবালিকাদের অধিকাংশের প্রেম হয়েছে মোবাইলের মাধ্যমে। যেহেতু ছেলেরা স্কুলছুট এবং কম বয়সে কাজে যুক্ত হচ্ছে, তার পরেই প্রেমিকাকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করছে। পরিবারিক কারণও এর জন্য দায়ী।
তবে দপ্তরের পক্ষে চাইল্ড ম্যারেজ বন্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে। আগামী দিনে নাবালিকার বাবা-মাকেও কাউন্সেলিং করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।' চাইল্ড ম্যারেজ বন্ধ করতে ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন। স্কুলে স্কুলে কাউন্সেলিং তার অন্যতম। যে সমস্ত নাবালিকা বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করছে তারা ১৫-১৬ বছর বয়সি স্কুল পড়ুয়া। অবাক করা বিষয় হলো, বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া অধিকাংশ নাবালিকার বয়ফ্রেন্ডদের একটা বড় অংশ ১৮-১৯ বছর বয়সের স্কুলছুট। ধরা পড়ার পরে জীবনের শুরুতেই পকসো এবং অপহরণ মামলায় জড়িয়ে পড়ছে তারা। উদ্ধার করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার পরেও সেই নাবালিকা ফের পালিয়ে গিয়েছে, এমন প্রমাণও মিলেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্ধার হওয়া নাবালিকার উপরে নজর রাখার জন্য প্রতি মাসে চাইল্ড প্রোটেকশন কমিটির সদস্যরা তাদের বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছেন। সেই রিপোর্ট নিয়মিত চাইল্ড ম্যারেজ ট্র্যাকিং অ্যান্ড মনিটরিং সিস্টেমে আপলোডও করা হচ্ছে।