জিনগত কারণেই অ্যাজমা রোগের শিকার শিশুরা নাকি রয়েছে বড় কোন কারণ? কীভাবে নিরাময় সম্ভব, জানুন বিশেষজ্ঞদের মত...
আজকাল | ০৪ মে ২০২৫
গোপাল সাহা: রাজ্য তথা দেশজুড়ে অ্যাজমা অর্থাৎ শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে ভুগছে শিশুরা। চিকিৎসকদের মতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর প্রধান কারণ জিনগত অর্থাৎ বংশ পরম্পরা। পরিবেশ দূষণগত কারণ থাকলেও অ্যাজমা অর্থাৎ শ্বাসকষ্ট জনিত রোগের প্রতিফলন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জিনগতভাবে বয়ে আসে শিশুদের মধ্যে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
চিকিৎসা শাস্ত্র ও বিশেষজ্ঞদের পাঁচ বছরের নীচের শিশুরা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্য়ায় ভোগা মানেই তা আসলে অ্যাজমা নয়।
অধিকাংশ চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাজমা আসলে কোন ফুসফুস জনিত রোগ নয়। এটি আসলে শ্বাসনালীর কারণে হয়ে থাকে। শ্বাসনালীর শেষ অংশে যে ছিদ্রের ব্যাস অর্থাৎ পরিমাপ রয়েছে সেটা সংকুচিত হয়ে গেলে সেখান থেকে একপ্রকার মলিকিউল এবং আলভিওলাই বেরতে থাকে, যা শ্বাসনালীতে বাধা সৃষ্টি করে। যার ফলে এই রোগের সৃষ্টি হয়। চিকিৎসকদের মতে, এই রোগ নিরাময়ে অন্য যেকোনও মৌখিক ওষুধের থেকে ইনহেলারে অনেক দ্রুত কার্যকরী। এক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও থাকে না।
এই বিষয়ে পিয়ারলেস হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৌমিক ধর আজকাল ডট ইন-কে বলেন, "অ্যাজমা মূলত তিন ধরনের হতে পারে- ১) মাইল্ড অর্থাৎ হালকা স্তর, মাঝেমধ্যে প্রভাব দেখা যায়। ২) মডারেট অর্থাৎ আগের থেকে সিরিয়াস বা এক্ষেত্রে রাতের দিকে প্রভাব দেখা যায়। ৩) সিভিআর অর্থাৎ খুবই গুরুতর, যে কোন সময় প্রভাব পড়তে পারে প্রত্যেকদিন একাধিকবার দিনে রাতে।"
ডা. সৌমিক ধরের কথায়, "অনেকগুলো বিষয় আছে যেগুলো অ্যাজমার মত যেমন, কম বয়সে ব্রঙ্কিওলাইটিস, আপার এয়ারও য়েট অবস্ট্রাকশন ইত্যাদি। যা পাঁচ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের মধ্যে অধিক মাত্রায় লক্ষণীয়। এজন্য চিকিৎসকরে কাছে যাওয়া প্রয়োজন। তিনি পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসা করবেন, চিকিৎসক উপযুক্ত ওষুধ দিলেই ঠিক হয়ে যায়। তবে ধৈর্য ধরে চিকিৎসা করতে হবে।"
এই বিষয়ে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংযুক্তা দে বলেন, "ওয়ার্ল্ড অ্যাজমা ডে-তে এবার ট্যাগলাইন 'ইনহেলার্স ফর এভরিওয়ান' অর্থাৎ ইনহেলার অ্যাজমার ক্ষেত্রে খুবই জরুরি এবং সকলের ব্যবহার করা উচিত, এটাই আমাদের প্রচেষ্টা।" তিনি আরোও বলেন, "দু'বছরের নীচে বাচ্চাদের ভাইরাল ইনফেকশন বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে কিন্তু সেটাকে আমরা অ্যাজমা বলি না, ওটা আসলে ভাইরাল ইন্ডিয়োউইস। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে যে এজমা হবেই এমনটা নাও হতে পারে, সম্ভাবনা কম। তবে পারিবারিক হিস্ট্রিতে যদি থাকে তাহলে সম্ভাবনা প্রবল মাত্রায় বেড়ে যায় অথবা সেদিকেই যায়। এবং তার জন্য প্রপার চিকিৎসা এবং ইনহেলারটা ঠিকমতো নেওয়াটা জরুরি। ইনহেলারে কোনওরকম কোন ভয়ের বিষয় নয়, যারা ভয় পাচ্ছেন ভুল করছেন। ইনহেলারে অনেক তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠা যায়। তবে এই ধরনের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী ধৈর্য থাকতে হবে।"
শনিবার পিয়ারলেস হাসপাতালে 'বিশ্ব এজমা দিবস' উদযাপন উপলক্ষে উপস্থিত অ্যাজমা তে আক্রান্ত শিশুর মা শ্রীমতি দীপান্বিতা সেনাপতি আজকাল ডট ইন-কে বলেন, "আমার ছেলে এক বছর বয়স থেকে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। আজ অনেক সুস্থ। এখন বয়স আট বছর। ধৈর্য ধরে আমি চিকিৎসা করিয়েছি তাই আজ অনেক ভালো আছে। গত বছর সাত বছর বয়সে ক্যারাটেতে ন্যাশনালে সিলভার মেডেল জিতে এসেছে। ডাক্তাররা বলেছেন যে আর কিছুদিন চিকিৎসায় থাকলে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবে।"