দিলীপ ঘোষ সস্ত্রীক শ্রীশ্রী জগন্নাথ ধামে হাজির হয়েছেন এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক করেছেন। বিজেপির এক মাঝারি মাপের নেতা খবরটা জানিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর কাছে বুধবার রাতে প্রশ্ন রেখেছিলেন, ‘ব্যাপারটা কী মনে হচ্ছে?’ জবাবে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমার সুবিধা হল! যা বোঝার বুঝে নিন।’
অর্থাৎ বিজেপির রাজনীতিতে দুই মেরুর দুই নেতার লড়াই এবার অন্য মোড় নিল। একজন মনে করছেন, আপদ বিদেয় হল! দিলীপবাবু দলবদল করবেন, না বিজেপির মধ্যে থেকেই লড়াই চালাবেন, নাকি রাজনীতির ময়দান ছেড়ে সন্ন্যাস নেবেন, সেটা সময়ই বলবে। তবে, রাজ্য বিজেপির ভিত যে তিনি কাঁপিয়ে নয়, হেলিয়ে দিয়েছেন, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের এক বছর আগে একটা ‘মাস্টার স্ট্রোক’ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শত্রু শিবিরে ভাঙনের চেয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা যুদ্ধের মস্ত বড় কৌশল। সেক্ষেত্রে মমতার এই মোক্ষম মার খেয়ে বিজেপি বেশ দিশেহারা। সেটা বোঝা যাচ্ছে, দিলীপবাবুর দিঘা-দর্শনকে কেন্দ্র করে দলের কদর্য কাজিয়া দেখে। সেই কাজিয়া রাতারাতি রাস্তায় নেমে এসেছে। যতদিন যাবে, বিজেপির অন্তর্কলহ আরও বাড়বে।
দীর্ঘদিন আরএসএসের নিষ্ঠাবান সেবক দিলীপবাবু রাজনীতিতে আসার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন। কিন্তু তিনি রাজ্য বিজেপির সভাপতি হওয়ার পর দলের যে রেকর্ড সাফল্য এসেছিল, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। ২০১৯ সালে লোকসভার নির্বাচনে এ রাজ্যে পদ্মফুলের প্রার্থীরা ১৮টি আসনে জেতেন। বিজেপি ৪১ শতাংশ ভোট পায়।
এই দিলীপবাবুই আবার ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দলের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তাঁকে নিজের আসন মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দিলীপবাবু টিকিট পান বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে। শুনেছি, তিনি ভোটে লড়তেই চাননি। ভোটে হেরেও যান। তারপর থেকেই নাকি দলবদলুদের বিরুদ্ধে বিজেপির অন্দরে বিদ্রোহের ধ্বজা ওড়াতে থাকেন। দল সম্পর্কে হতাশাও তাঁকে গ্রাস করে।
হতে পারে সেই হতাশাও দিলীপবাবুর দিঘা এবং মমতা দর্শনের একটা কারণ। তবে কারণ যাই হোক না কেন, রাজ্য বিজেপির ঘরে দিলীপবাবু বস্তুত আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। ভোটের বাদ্যি বাজতে না বাজতেই দিঘা-বিতর্ক বিজেপিকে যথেষ্ট বিপাকে ফেলে দিয়েছে। দলের নেতা-নেত্রীদের মধ্যে রাজনীতি এবং ব্যক্তিগতস্তরে যে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু হয়েছে, তা তৃণমূল কংগ্রেস নিশ্চয়ই উপভোগ করছে। মমতার মাস্টারস্ট্রোকে রাজ্য রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠেছে।