অসিত রজক, বিষ্ণুপুর: ফের লড়াই দুই প্রাক্তন! বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ ও তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা মণ্ডলের মধ্যে ফের বাকযুদ্ধই শুধু নয়, বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে এবার আইনি লড়াইও শুরু হল। সাংসদের চরিত্র এবং তাঁর পরিবার নিয়ে প্রাক্তন স্ত্রীর কুমন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে আইনি নোটিস পাঠাচ্ছেন বলে সংবাদমাধ্যমে জানালেন সৌমিত্র খাঁ। রবিবার বিষ্ণুপুরে সমস্ত নথিপত্র হাতে নিয়ে সুজাতা মণ্ডলের বিরুদ্ধে পালটা দুর্নীতির ভূরি ভূরি অভিযোগ তুললেন সাংসদ। তাঁর অভিযোগ, বাঁকুড়া জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ পদ ব্যবহার করে সুজাতা বেআইনিভাবে অর্থ নিয়েছেন আর সেই টাকায় বিদেশ সফর করেছেন।
বিতর্কের সূত্রপাত দিন তিনেক আগে। মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে গত ৩০ এপ্রিল সস্ত্রীক দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে গিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। তাতেই বঙ্গ বিজেপির রোষানলে পড়েন তিনি। একে একে সৌমিত্র খাঁ, সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীরা তাঁর এহেন কাজের সমালোচনা করেন। তার মধ্যে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক মন্তব্য ছিল বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-র। সোশাল মিডিয়া পোস্টে তো বটেই, সাংবাদিক বৈঠকেও দিলীপ ঘোষের চরিত্রকে কালিমালিপ্ত করার মতো মন্তব্য করেছিলেন তিনি। পদ্মশিবিরের দুই নেতার মধ্যে এহেন আকচাআকচির মাঝে এসে পড়েন সৌমিত্রর প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা মণ্ডল, যিনি এই মুহূর্তে শাসক শিবিরের নেত্রী। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে বিষ্ণুপুর থেকে প্রাক্তন স্বামীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হেরেছেন।
দিলীপ ঘোষকে সমর্থন করতে গিয়ে প্রাক্তন স্বামীর বিরুদ্ধে কুমন্তব্য শোনা গিয়েছিল সুজাতার মুখে। সৌমিত্রর পরিবারের উদ্দেশে তাঁর কটাক্ষ, ”গাই-বাছুর নিয়ে দিল্লিতে লুকিয়ে থাকতে হয় তাঁকে। আসলে যাঁকে এখন বিষ্ণুপুরের ওই ব্যক্তি (সৌমিত্র খাঁ) স্ত্রী বলে পরিচয় দিচ্ছেন, তিনি তো জেলায় বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি অভিজিৎ রায়চৌধুরীর বিধবা স্ত্রী। তাঁদের লীলাখেলাটা তো অভিজিৎবাবু বেঁচে থাকতেই ধরা পড়ে গিয়েছিল। সেই শোকে হয়ত তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।”
এহেন কুরুচিকর মন্তব্যের পালটা দিয়ে এবার সুজাতা মণ্ডলকে আইনি নোটিস পাঠানোর পথে হাঁটছেন সৌমিত্র খাঁ। রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর বক্তব্য, ”লাগাতার উনি ব্যক্তিগত আক্রমণ করে চলেছেন। আর এসব কথা যে বলছেন, ওঁর নিজের বোনের স্বামী মারা গেলে, তাঁর মেয়ে থাকলে কী বলতেন? এরকমই বলতেন যে গাই-বাছুর নিয়ে আছে? আর আমিও ওঁর দুর্নীতির কথা জানি। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে সুজাতা মণ্ডল কলকাতা একটি সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। সেইসঙ্গে বাঁকুড়ার জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ পদে রয়েছেন। একসঙ্গে স্কুলের বেতন এবং জেলা পরিষদের বেতন ? দুটি সরকারি ভাতা কী করে পান? জাপান-সহ বিদেশে ঘুরে বেড়ায় কী করে? মৎস্য দপ্তরের কাটমানিতে এসব করছেন।” বিষ্ণুপুরের দুই প্রাক্তনের এই লড়াই এখন কতদূর গড়ায়, সেটাই দেখার।