‘পাহাড়ের নিচে সেনা ছিল, গুলির শব্দ পেয়েও আসেনি’, পহেলগাঁও হামলা নিয়ে বিস্ফোরক নিহতের স্ত্রী
প্রতিদিন | ০৪ মে ২০২৫
রমেন দাস: ১২ দিন আগে পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলা প্রাণ কেড়েছে স্বামীর। চোখের সামনে বাড়ির একমাত্র রোজগেরে সদস্যের এহেন পরিণতিতে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে এখন বাঁচার লড়াই মূল চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে বেহালার গুহ পরিবারে। গত ২২ এপ্রিল জঙ্গি হামলার ঘটনায় মানসিক ট্রমা এখনও কাটেনি। রবিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সমীর গুহর স্ত্রী শর্বরীদেবী সেদিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথাও বললেন। তাঁর কথায় স্পষ্ট, ওইদিন জঙ্গি হামলা রুখতে সেনাবাহিনীর গাফিলতি ছিল। পহেলগাঁওয়ে বৈসরন উপত্যকার নিচেই সেনা মোতায়েন ছিল। গুলির শব্দ শুনেও তাঁরা আসেননি বলে অভিযোগ শর্বরী গুহর। আর নির্বিকারভাবে তাঁর স্বামী সমীরবাবুকে গুলি করার পর জঙ্গিরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিল ? ‘মোদি কা আদমি হ্যায়।’
ফুরফুরে আবহাওয়ায় ছবির মতো সুন্দর বৈসরন উপত্যকায় ঘোরার আমেজ এক নিমেষে ছারখার হয়ে গিয়েছিল গত ২২ নভেম্বর দুপুরে। ঠিক কী ঘটেছিল? শর্বরীদেবীর কথায়, ”আমরা ভ্যালিতে ঘুরছিলাম, ছবি তুলছিলাম। হঠাৎ কিছু গুলির শব্দ কানে এল। আমার স্বামী ওখানের একজন দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে? উনি জানালেন, এখানে বাঁদরদের তাড়াতে মাঝেমাঝে শূন্যে গুলি ছোঁড়া হয়। কিন্তু তারপরও গুলির শব্দ চলতে থাকে। তখন ওঁরা বলেন, আমরা যেন মাটিতে শুয়ে পড়ি। তারপর তো এসব হয়ে গেল। ওরা এসে প্রথমে আমাদের বলল, ‘হিন্দু-মুসলমান আলাদা হয়ে যাও। যারা মুসলমান, তারা কলমা পড়ো।’ তখন আমাদের পাশেই থাকা মুসলিমরা কলমা পড়তে শুরু করল। তারপর হিন্দুদের বেছে বেছে গুলি চালাল। আমার স্বামীর সামনে একজন এসে গুলি করল। তারপর বলল, ‘মোদি কা আদমি হ্যায়।’ আমি ওই অবস্থাতেও খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে আমার স্বামী যে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী, ওরা জানল কীভাবে?”
সমীরবাবু কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে চাকরি করতেন। তাই কি জঙ্গিদের টার্গেট হতে হল তাঁকে? এ প্রশ্নের উত্তর জানা নেই। তবে শর্বরীদেবীর মতে, সেনার ব্যর্থতায় এত বড় ঘটনা ঘটে গেল। তাঁর কথায়, ”সেনাবাহিনী তো পাহাড়ের নিচেই ছিল। ওখানে ক্যাম্প আছে তাঁদের। এত গুলির শব্দ, তা শুনেও কেউ আসেনি। এটা তো সম্ভব নয় যে তাঁরা গুলির শব্দ শুনতে পাননি।” সেনার ব্যর্থতাই হোক কিংবা গোয়েন্দা ব্যর্থতা ? যে কারণেই হোক, পহেলগাঁওয়ে ২৬ টি নিরীহ প্রাণ চলে গিয়েছে সন্ত্রাসের কবলে। তা আর ফিরবে না। মুছে যাবে না স্বজন হারানোর বেদনাও।