• কোটি কোটি টাকা জলে, ধস নিয়ে দিশাহীন সরকার
    এই সময় | ০৪ মে ২০২৫
  • সুপ্রকাশ চক্রবর্তী, হাওড়া

    একদিকে জঞ্জাল ফেলা নিয়ে সমস্যা, অন্য দিকে জঞ্জালে জমে যাওয়া নিকাশি নালা সংস্কার এই দুই সমস্যা যেন গোদের উপরে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে হাওড়া পুরসভার কাছে। গত মাসে হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ধস নেমে বুজে যায় প্রধান নিকাশি নালা। ফাটল ধরে ভাগাড় সংলগ্ন এফ রোডের বস্তিতে। দ্রুত পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী কয়েক কোটি টাকা খরচ করে তাঁদের জন্য খিদিরপুর থেকে কন্টেনার এনে সেই কন্টেনার কেটে থাকার জন্য ঘর বানিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। পূর্ত দপ্তর তড়িঘড়ি সেই ঘর তৈরিও করে দেয়। কিন্তু অত্যধিক গরমে বাসিন্দারা সেখানে থাকতে পারবেন না বলে, কন্টেনার এখন তালাবদ্ধ। কয়েক কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা এইসব কন্টেনার-বাড়ি নিয়ে এখন কী করা হবে, তার কোনও সদুত্তর নেই কারও কাছে। পাশাপাশি, বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বেলগাছিয়া পচাখাল। ভাগাড়ের নোংরা আবর্জনা জমতে জমতে ১০ ফুট নীচে এতটাই প্লাস্টিক ও আবর্জনান্তর তৈরি হয়েছে যে, দেশের সব থেকে বড় শিট পাইলিং সংস্থা কয়েক কোটি টাকা খরচ করে বড় বড় লোহার শিট নিয়ে এলেও তা মাটিতে পোঁতা যায়নি।

    বাধ্য হয়ে তাঁরা ফের বল্লা পাইলিংয়ে ফিরে আসেন। সেটাও বেশি দূর পোঁতা যায়নি। নীচে শক্ত আবর্জনার স্তরে তা আটকে যায়। বেলগাছিয়ায় ধস নামার আগে পর্যন্ত সেখানে বল্লা পাইলিং ছিল। কিন্তু ভাগাড়ের ধস এতটাই শক্তিশালী ছিল যে. মাটির চাপে তা-ও ভেঙে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই বড় বড় জেসিবি দিয়ে, প্রচুর শ্রমিক লাগিয়ে সেই বুজে যাওয়া খালের মাটি তোলা হয়। খালের উপরে যে ঢালাই সাঁকো ছিল, সেগুলি ভেঙে ফেলা হয়। কিছু আবার যদি ধস নামে, সেই ধস আটকাতে গেলে প্রয়োজন শিট বা বল্লা পাইলিংয়ের মতো খুঁটির সাপোর্ট। আর সেই জন্যই কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়াররা দিনরাত এক করে সেই কাজ করে চলেছেন। কিন্তু কোনও ভাবেই সেই কাজেও তাঁরা সফল হতে পারেননি।

    লোহার শিট পাইলিং যাঁরা করছেন, সেই সংস্থার এক কর্মচারী জানান, কয়েক কোটি টাকা খরচ করে লোহার শিট আনা হয়েছিল। সেই শিট মাটিতে পোঁতার জন্য আরও দেড় কোটি টাকা দামের একটি মেশিন আনা হয়েছিল। শিট অর্ধেক করে কেটেও মাটিতে বসানো যায়নি। নতুন করে শুরু হয়েছে বল্লা পাইলিংয়ের কাজ। কিন্তু সেই কাজেও সে রকম সাফল্য আসেনি। এই শাল বল্লা কিনতেও কয়েক কোটি টাকা ইতিমধ্যেই খরচ হয়ে গিয়েছে।

    বল্লার একদিক ছুঁচলো করেও বেশি দূর ঢোকানো যায়নি। আশঙ্কা, এই খুঁটি কত দিন এত বড় পাহাড়ের মাটি ধরে রাখতে পারবে? এ দিকে, ভাগাড়ের এই নিকাশি নালার কাজ শেষ না হওয়ায় জমা জল বার করা যায়নি। এলাকার বাসিন্দারা ফের শুক্রবার হাওড়ার বামুনগাছিতে বেনারস রোড অবরোধ করেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত দু'মাস আগে ভাগাড়ে বস নামার কারণে হাওড়া পুরসভার দীর্ঘদিন ধরে পচা, নোংরা জলে ভরে যায় ৭ নম্বর ওয়ার্ড। বিভিন্ন সময়ে, দিনে ও রাতে এই অঞ্চলের বাসিন্দারা রাস্তা অবরোধ থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উত্তর হাওড়ার বিধায়ক ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও, সমস্যার সমাধান হয়নি। তাই তাঁরা এ দিন ফের বেনারস রোড অবরোধ করেন। পরে পুরসভার আশ্বাসে অবরোধ ওঠে।

    হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী অবশ্য জানিয়েছেন, বল্লা পাইলিংয়ের কাজ চলছে। জলও নামছে। একটু ধীর গতিতে। তবে ধীরে ধীরে সব জল নেমে যাবে। আপাতত এই আশ্বাসই ভরসা এলাকার বাসিন্দাদের।

  • Link to this news (এই সময়)