বাংলায় প্রথমবার! একইসঙ্গে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ বিরহোড় জনজাতির ৪ ছাত্রী
প্রতিদিন | ০৫ মে ২০২৫
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কুইজ বই-এ প্রশ্ন রয়েছে কোন জনজাতি বিলুপ্তের পথে। উত্তর নিচেই লেখা, বিরহোড়। সেই বিলুপ্ত বিরহোড় জনজাতির ৪ কিশোরী এবার মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে। এর আগে একসঙ্গে ৪ বিরহোড় ছাত্রীর মাধ্যমিকে পাশের উদাহরণ নেই, বলছে তথ্য। ১৯৬০ সাল থেকে ২০২৫-র মাধ্যমিকের আগে পর্যন্ত এই জনজাতির মোট চার মেয়ে মাধ্যমিকে সাফল্য পেয়েছিল। আর এবার একসঙ্গেই ৪! সাফল্য গর্বিত করেছে তাঁদের স্কুল-সহ পুরুলিয়া জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দপ্তরকেও।
পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির ভূপতি পল্লির বাসিন্দা ওই ৪ কিশোরী। দিবিয়া শিকারি, শম্পা শিকারি, মালা শিকারি ও পদ্মাবতী শিকারি। দিবিয়ার প্রাপ্ত নম্বর ২৬৫। শম্পার ২২০। মালা পেয়েছে ১৯৩। পদ্মাবতীর নম্বর ১৮৭। তারা সকলেই বাঘমুন্ডির ধসকাতে পন্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আদর্শ আবাসিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করত। হস্টেলে থেকেই চলত তাদের লেখাপড়া। এর আগে বিরহোড় জনজাতির যে চারজন ছাত্রী মাধ্যমিকের গণ্ডি টপকেছেন তারা হলেন জানকি শিকারি, রতনি শিকারি, জবা শিকারি ও কিরণমালা শিকারি। তাদের বাড়িও ভূপতি পল্লীতে। রাজ্য সরকারের তৎকালীন মন্ত্রী ভূপতিরঞ্জন মজুমদার ১৯৬০ সালে এই বিরহোড় জনজাতিকে জঙ্গল থেকে নিয়ে এসে বাঘমুন্ডির ওই ভূপতিপল্লীতে পুনর্বাসন দিয়েছিলেন। তবে ওই ভূপতিপল্লি ছাড়াও বলরামপুর, ঝালদা এক ব্লকেও কিছু বিরহোড় জনজাতির মানুষ রয়েছেন। এই জনজাতির কিছু অংশ রয়েছে ঝাড়খণ্ডেও।
মূলত জঙ্গলে বসবাস করা এই জনজাতি এখনও সেভাবে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসেনি । বরং তারা জঙ্গল ঘেঁষা এলাকাতেই থাকতে ভালোবাসেন। এখনও তারা নিয়ম করে শিকারে যান। সেই পিছিয়ে পড়া জনজাতির চার মেয়ের মাধ্যমিকের সাফল্যে ওই স্কুল ভীষণই খুশি। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগ দ্বারা পরিচালিত। ওই দপ্তরের পুরুলিয়ার প্রকল্প আধিকারিক শিলাদিত্য চক্রবর্তী বলেন, “একসঙ্গে বিরহোড় জনজাতির ৪ ছাত্রীর মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি গর্বের।” জানা গিয়েছে, ওই চার কন্যা-ই উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হবে। দিবিয়া ও মালার কথায়, “এভাবেই আমরা এগিয়ে যাব। আমাদের জুনিয়ররা যাতে লেখাপড়ায় উৎসাহ পায় তার চেষ্টা করা হচ্ছে সব তরফ থেকে।”