২ নম্বরের জন্য মেধা তালিকায় স্থান হয়নি মুদিখানা চালিয়েই জেলার সেরা কৌশিক
বর্তমান | ০৫ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: মুদি দোকান চালিয়েই মাধ্যমিকে জলপাইগুড়ি জেলার সেরা কৌশিক ঘোষ। শহরের সোনাউল্লা হাইস্কুলের এই ছাত্রের প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৪। মাত্র দু’নম্বরের জন্য মেধা তালিকায় স্থান মেলেনি। এনিয়ে আক্ষেপের অন্ত নেই কৌশিকের। খাতা রিভিউ করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে।
জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া পাহাড়পুর পঞ্চায়েতের ইন্দিরা কলোনির বাসিন্দা কৌশিক। বাবা বিপ্লব ঘোষ টোটো চালান। বাড়ির সামনে একটি ছোট্ট মুদি দোকান রয়েছে তাদের। সংসারের কাজ সামলে কিছুটা সময় দোকানে বসেন মা ঝুনু ঘোষ। বাকি সময় দোকানদারি করে কৌশিক। দোকানদারি করতে করতেই মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিয়েছে সে। জীবন বিজ্ঞান ও ভৌত বিজ্ঞানে কৌশিকের প্রাপ্ত নম্বর ১০০। এছাড়া অঙ্ক ও ভূগোলে ৯৯ করে পেয়েছে সে। তার এই নজরকাড়া ফলে খুশি স্কুলের শিক্ষকদের পাশাপাশি পাড়াপ্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনরা। ফল ঘোষণার পর থেকে মাধ্যমিকে জেলার সেরা কৌশিককে শুভেচ্ছা জানাতে হাজির হন অনেকেই। দুঃস্থ মেধাবী ওই পড়ুয়ার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা।
একাদশে নিজের স্কুলেই বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৌশিক। সেইসঙ্গে নিট দেওয়ার প্রস্তুতিও এখন থেকেই শুরু করে দিতে চায় সে। তার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া। জেলার গর্ব কৌশিকের কথায়, আমাদের পরিবারে ঠাকুমা ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পিসি রয়েছেন। সবমিলিয়ে পাঁচজনের সংসারে একমাত্র রোজগেরে বাবা। তারউপর আমার পড়াশোনা। এতকিছুর পরও বাবা আমার জন্য গৃহশিক্ষক রেখেছিলেন। তাঁর কথায়, আমাদের বাড়ির সামনে একটা ছোট্ট মুদি দোকান আছে। আগে বাবা সেটি চালাত। কিন্তু বেচাকেনা ভালো হয় না দেখে বাবা টোটো চালানো শুরু করে। বাবার উপর কিছুটা চাপ যাতে কমে, সেজন্য আমি দোকানে বসা শুরু করি।
দোকান চালিয়ে কীভাবে মাধ্যমিকের পড়াশোনা চলত? কৌশিকের উত্তর, টেস্ট পরীক্ষার আগে পর্যন্ত দোকানে বসেই পড়াশোনা করতাম। টেস্টের পর থেকে মা সংসারের কাজ সামলে কিছুটা সময় দোকানে বসত। প্রাইভেট টিউশনের সময়টুকু ছাড়া বাকিটা দোকানে বসেই মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিয়েছি।
শনিবার কৌশিকের বাড়িতে গিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসেন জলপাইগুড়ি সদর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিনয় রায়। এবিটিএ’র পক্ষ থেকেও তাকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। বাড়িতে এসে শুভেচ্ছা জানিয়ে গিয়েছেন সিপিএম কর্মীরা। আগামী দিনে পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যেতে গিয়ে কৌশিককে যাতে কোনওরকম প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে না হয়, সেজন্য প্রত্যেকেই তার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। শিক্ষকের সঙ্গে কৌশিক। - নিজস্ব চিত্র।