• দু’বেলাই অন্যের বাড়িতে কাজ, রাতে পড়ে মাধ্যমিকে ৬৪৫ ভূমিকা মাহারার
    বর্তমান | ০৫ মে ২০২৫
  • সাগর রজক, মানিকচক: অভাবের সংসার। কষ্টের জীবন বদলাতে হলে কিছু একটা করতে হবে। সেই লক্ষ্য ছিল স্থির। তার জন্য কঠোর পরিশ্রম করার রাস্তা বেছে নিয়েছে মানিকচকের এনায়েতপুর ইএ হাইস্কুলের ভূমিকা মাহারা। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াইয়ের প্রথম ধাপ সসম্মানে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তার চোখে জল। 

    পরিবারে ভূমিকা ছাড়াও বোন ও দিদা। বাবা মানসিক রোগী। চারজনের তিনবেলা অন্ন সংস্থানের জন্য সকাল, সন্ধ্যে অন্যের বাড়িতে কাজ করার পথ বেছে নিয়েছিল ভূমিকা। কাজের শুরুটা বছর ছয়েক আগে। সেবার মায়ের মৃত্যুর পর পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় সে। সকালে কাজকর্ম সেরে বোনকে নিয়ে সাইকেলে রোজ তিন কিমি দূরের স্কুলে যাওয়া আসা করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে যেত ভূমিকা। কিন্তু তার তো আর বিশ্রাম নেওয়ার উপায় নেই। কারণ আইএএস অফিসার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে ভালো করে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। তাই দিনভর কঠোর পরিশ্রম করার পর পড়ার জন্য রাতটাকেই বেছে নিত ভূমিকা। অনেক সময় পড়া মুখস্থ না হওয়ায় ভোর পর্যন্তও পড়া চালিয়ে গিয়েছে সে। এভাবেই মাধ্যমিকে ৬৪৫ পেয়ে অভাবের সংসারে আলোর দিশা দেখাচ্ছে ভূমিকা।

    চৌকি মিরদাদপুর অঞ্চলের সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা ভূমিকা। একচালা মাটির ঘরে বাস। এনায়েতপুরের সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপকও ভূমিকা। তার কথায়, ছোট থেকেই স্বপ্ন আইএএস অফিসার হওয়া। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। বিজ্ঞান নিয়ে পরবর্তীতে পড়াশোনা করতে টাকার প্রয়োজন। আমাদের আর্থিক অবস্থা একদম খারাপ। তাই অন্যের বাড়িতে কাজ করার পাশাপাশি টিউশন পড়ানো শুরু করব। কষ্ট হলেও স্বপ্ন পূরণ করতে এভাবেই পরিশ্রম করে যাব।    

    ভূমিকার পাশে দাঁড়িয়েছেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, ভূমিকা মেধাবী ছাত্রী। সবসময় তার পাশে থাকবে স্কুল। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে যা খরচ হবে ব্যক্তিগতভাবে বহন করব।

    বাকিটা পরিশ্রম করেই অর্জন করতে চায় ভূমিকা!  নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)