• দুই হাত অকেজো, মনের জোরে মাধ্যমিকে নজর কেড়েছে নারায়ণ
    বর্তমান | ০৫ মে ২০২৫
  • সংবাদদাতা, ময়নাগুড়ি: অনেকেই বলেছিল আমার ছেলের দ্বারা পড়াশুনা হবে না। কিন্তু তাদের যোগ্য জবাব দিয়ে মাধ্যমিক পাস করল আমার ছেলে। চোখে জল নিয়ে এমনই বললেন ময়নাগুড়ির খাগড়াবাড়ি- ২ এর বিশেষভাবে সক্ষম নারায়ণ রায়ের মা সারথী রায়। 

    সারথী রায় এবং তাঁর স্বামী বসন্ত রায় প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পেরোননি। ছেলের দু’হাত জন্ম দেখেই অস্বাভাবিক। ছোট থেকে কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে সে। হার মানেনি। সেই জেদেই সে মাধ্যমিক পাস করেছে। এতে চোখে জল থাকলেও মুখে হাসি ফুটেছে রায় পরিবারের।

    নারায়ণ রায় টেকাটুলি হাইস্কুলের ছাত্র। জন্ম থেকেই তার দুটি হাত অকেজো। কিন্তু মাধ্যমিক পাস করার জেদ চেপেছিল তার। কোনওভাবে হাতের কব্জিতে কলম চেপে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে সে উত্তীর্ণ হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় ১৯৪নম্বর পেয়েছে। ভালোভাবে লিখতে পারলে ভালো ফলাফল করত বলে বাড়ির লোক মনে করছে। 

    নারায়ণ রায়ের বাবা বসন্ত রায় দিনমজুরির কাজ করেন। বাড়িতে এক বোন রয়েছে। দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছাত্রটি টেকাটুলিতে একটি টিউশন পড়তো। কিন্তু নারায়ণের থেকে কোন বেতন নেওয়া হত না। মাধ্যমিক পরীক্ষাকেন্দ্রে তাকে পৌঁছে দিয়েছিল ময়নাগুড়ি থানার পুলিস।  

    তার মা সারথী রায় বলেন, অনেকেই বলেছিল পড়াশোনা শিখিয়ে লাভ নেই। কিন্তু ছেলের পাশাপাশি আমার মনে জেদ চেপে গিয়েছিল। ছেলের দুটি হাতের আঙ্গুল কাজ করে না। এরপরও আমরা উৎসাহ দিয়েছি। সে কম্পিউটার শিখতে চায়। কিন্তু আমাদের অর্থের অভাব। কষ্ট হলেও যতটা পারা যায় আমরা পড়াব। 

    নারায়ণ বলে, শারীরিক অক্ষমতা বলে কিছু নেই। মনের শক্তি আসল শক্তি। পরীক্ষা দিয়েছে, পাস করেছি। যদি হাতের আঙ্গুল কাজ করতো, তাহলে আরও ভালো ফল করতাম। ভালো চাকরি পেয়ে বাবা মায়ের পাশে দাঁড়াব।  নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)