সোমনাথ চক্রবর্তী, ময়নাগুড়ি: শারীরিক অসুস্থতা থাকলেও সেই সমস্যাকে দূরে ঠেলে মাধ্যমিক পাশ করে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাল ময়নাগুড়ির শুভ মণ্ডল। ময়নাগুড়ি ব্লকের ঝাঝঙ্গীতে বাড়ি শুভর। রথেরহাট হাইস্কুল থেকে এবারে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল সে।
ছোট থেকেই কথা বলতে পারত না শুভ। চিকিৎসার জন্য চারবার ওকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বেঙ্গালুরুতে। দু’বার গলায় অপারেশন হয়েছে। এখন অল্পকিছু কথা বলতে পারে শুভ। পড়াশোনার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও চাপ কখনও ওকে দেওয়া হয়নি। নিজের ইচ্ছে শক্তিতে সে পড়াশোনা করে। মাধ্যমিকের সময় শুভকে পড়াশোনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন তার ভূগোলের গৃহশিক্ষক বিষ্ণুপদ চক্রবর্তী। ভূগোলে শুভ ৮৫ নম্বর পেয়েছে।
শুভর ইচ্ছা শক্তিকে সম্মান জানাতে রবিবার তার বাড়ি গিয়ে সংবর্ধনা জানান ময়নাগুড়ি থানার আইসি সুবল ঘোষ। আগামী দিনে ওর ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন যাতে পূরণ হয় সেই সাহস জোগান আইসি।
শুভ ৪৯৬ নম্বর পেয়েছে। ওর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, আলজিভ ছিল না। তাই নবম শ্রেণি পর্যন্ত ও কথা বলতে পারত না। বাবা-মাকে ইশারায় বলেছিল, গালায় অপারেশন করিয়ে সুস্থ করিয়ে নিয়ে আসতে। প্রত্যেকের মতো ও কথা বলতে চায়। ছেলের চিকিৎসা করিয়ে কিছুটা হলেও স্বাভাবিক করে তুলতে সামর্থ হয়েছেন শুভর বাবা গৌতম মণ্ডল।
শুভ বাংলায় ৭৫, ইংরেজিতে ৫৫, অঙ্ক ও জীবনবিজ্ঞানে ৬০ করে, ভৌতবিজ্ঞানে ৭১, ইতিহাসে ৯০ ও ভূগোলে ৮৫ নম্বর পেয়েছে। শুভর গৃহশিক্ষক বিষ্ণুপদবাবু বলেন, ছেলেটির ইচ্ছে ছিল তাই মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে সফল হল। শারীরিক অসুস্থতাকে জয় করে সকলের মুখে হাসি ফুটিয়েছে ও। আগামী দিনে শুভ ওর লক্ষ্যে পৌঁছবে, এটা আমার বিশ্বাস।
শুভর মা কল্পনা মণ্ডল বলেন, আমরা ওকে কখনও কোনও কিছুতে চাপ দিই না। ও নিজেই পড়াশোনা করে। ছেলে ৭১ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। আমরা খুশি। ছেলে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক, সেটাই চাইছি। আইসি বলেন, ইচ্ছা শক্তিই আসল। সেটাই শুভ প্রমাণ করে দিয়েছে। শুভকে সংবর্ধিত করছেন ময়নাগুড়ি থানার আইসি সুবল ঘোষ। - নিজস্ব চিত্র।