বাবা ভ্যান চালক, মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল বিষ্ণুপুরের যুগীপাড়ার শুভ গড়াই
বর্তমান | ০৫ মে ২০২৫
সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: বাবা পেশায় ভ্যানচালক। মা গৃহবধূ। মাটির চালাঘরে অভাবের মধ্যে জীবনযাপন। অনটনের সঙ্গে লড়াই করে মাধ্যমিকে ৬৪২নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়েছে বিষ্ণুপুরের গোপালগঞ্জের যুগীপাড়ার শুভ গড়াই। শুভ এবার বিষ্ণুপুর কৃত্তিবাস মুখোপাধ্যায় হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক দিয়েছিল। ক্লাসে বরাবরই সে প্রথম হয়েছে। মাধ্যমিকেও সে স্কুলের সেরা হয়েছে। তার সাফল্যে পরিবার ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা খুশি। শুভ বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। তবে ছেলের উচ্চশিক্ষার খরচ কীভাবে চালাবেন, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তার বাবা রাকেশ গড়াই ও মা চায়নাদেবী।
শুভ বাংলায় ৯২, ইংরেজিতে ৯০, গণিতে ৮৩, ইতিহাস ও ভূগোলে ৯৪, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৫ ও জীবনবিজ্ঞানে ৯৪ পেয়েছে। সে বলে, পরিবারে অভাবের কারণে পৃথক কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না। একটি কোচিং সেন্টারে পড়তাম। তাও পরীক্ষার দু’মাস আগে ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে নিজেই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। রোজ ৮-১০ঘণ্টা পড়াশোনা করেছি। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাহায্য পেয়েছি। তাতেই সাফল্য মিলেছে। আপাতত নিজের স্কুলেই বিজ্ঞান নিয়ে পড়ব। ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ইচ্ছে আছে। কিন্তু, পরিবারে আর্থিক সমস্যার জন্য তা সম্ভব হবে কি না জানি না।
রাকেশবাবু বলেন, আমি সকাল থেকেই মাল বহনের জন্য ভ্যান নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। সেই আয়ে কোনওরকমে চারজনের সংসার চালাই। আমার মেয়েও কলেজে পড়ছে। তারও পড়াশোনার খরচ চালাতে হয়। ছেলে পরীক্ষায় ভালো ফল করায় খুব খুশি হয়েছি। সরকারি কোনও সাহায্য পেলে খুব ভালো হতো। চায়নাদেবী বলেন, স্বামীর সামান্য রোজগারে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। ঠিকমতো ছেলেকে টিউশনি দিতে পারিনি। প্রয়োজনীয় বইও কিনে দিতে পারিনি। তবু সে পরিশ্রম করে সাফল্য পেয়েছে। কিন্তু, আগামী দিনে পড়ার খরচ কীভাবে জোগাড় হবে, তা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। কৃত্তিবাস মুখোপাধ্যায় হাইস্কুলের টিআইসি মনোজকুমার দত্ত বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে ১১৪জন মাধ্যমিক দিয়েছিল। ৮৫জন পাশ করেছে। শুভই সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। আমরা বিদ্যালয়ের তরফে যতটা সম্ভব সাহায্য করেছি। আগামী দিনেও তাকে বইপত্র দিয়ে সাহায্য করা হবে।
বিষ্ণুপুর শহরের ১৪নম্বর ওয়ার্ডের যুগীপাড়ায় রাকেশ গড়াইয়ের টিনের চালা দেওয়া মাটির বাড়ি। টিন ফুটো হয়ে যাওয়ায় কিছুটা অংশে ত্রিপল দেওয়া রয়েছে। ওই বাড়িতেই ছেলেমেয়েকে নিয়ে দিন গুজরান করেন গড়াই দম্পতি। তাঁদের মেয়ে বিএ তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। প্রতিকূলতা সত্ত্বেও শুভর এই সাফল্যকে পড়শিরা কুর্নিশ জানিয়েছেন।