সংখ্যাতত্ত্বের সাহায্যে পূর্বাভাস মিলবে ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাতের, বিশ্বভারতীর অধ্যাপকের গবেষণায় সাফল্য
বর্তমান | ০৫ মে ২০২৫
ইন্দ্রজিৎ রায়, বোলপুর: সংখ্যাতত্ত্বের সাহায্যে পাওয়া যাবে ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের আগাম সতর্কবার্তা। সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন বিশ্বভারতীর স্ট্যাটিস্টিকসের অধ্যাপক দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে সহযোগিতা করেছেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব স্ট্যাটিস্টিক্সের একটি দল। দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক গবেষক দল ৩৭ হাজার ৩৩১টি ভূমিকম্প ও এক হাজার ১৯৩টি ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি করেছেন। তাঁদের গবেষণা ‘প্লস ওয়ান’ নামের আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই খবরে খুশির হওয়া শান্তিনিকেতন ক্যাম্পাসে।
প্রকৃতির কাছে মানুষ আজও অসহায়। প্রবল খরা, বন্যার পাশাপাশি, মানব জীবনে ভয়ঙ্কর অভিশাপ ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত। ভূগর্ভের শিলাস্তরে টেকটনিক প্লেটের স্থানান্তর বা একটির সঙ্গে অপর একটির ধাক্কায় ভূমিকম্প হয়। অন্যদিকে, পৃথিবীর গর্ভের উত্তপ্ত শিলা গলে ম্যাগমা তৈরি করে। সেগুলি বিক্রিয়ার ফলে তাপ ও গ্যাসের সৃষ্টি হয়, যা বেরিয়ে আসার ফলেই অগ্ন্যুৎপাত হয়।
অধ্যাপক দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় ও ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব স্ট্যাটিস্টিক্সের বিজ্ঞানীরা তাঁদের গবেষণায় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং তার কাছাকাছি হওয়া ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে একটা সম্পর্ক খুঁজে বের করেছেন। দেবাশিসবাবুর নেতৃত্বাধীন গবেষক দল বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে জানতে পেরেছেন যে, ভূমিকম্প কখন হচ্ছে এবং কোন দিক থেকে আসছে, তার ওপর নির্ভর করে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময় এবং তীব্রতা আন্দাজ করা সম্ভব।
সাধারণত ভূমিকম্প মাপার যন্ত্রগুলো ভূমিকম্প হওয়ার পরেই তথ্য দেয়। কিন্তু এই নতুন পদ্ধতিটি আগে থেকেই বিপদের সম্ভাবনা জানাতে পারবে। এর ফলে দুর্যোগের মোকাবিলা করার পরিকল্পনা সহজ হবে। বিশেষ করে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং হিমালয় অঞ্চলের মতো ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার জন্য এই গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও জাপান, ইন্দোনেশিয়া, চিলি এবং প্যাসিফিক রিং অব ফায়ারের মতো এলাকাতেও এই পদ্ধতি কাজে লাগতে পারে।
গবেষক দলটি দুটো নতুন নিয়ম বা মডেল তৈরি করেছেন। প্রথম মডেলে ভূমিকম্পের গড় তীব্রতাকে একটা বিশেষ গাণিতিক সূত্রের মাধ্যমে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। দ্বিতীয় মডেলে অন্য একটি গাণিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এই দুটো মডেলই খুব ভালোভাবে কাজ করেছে বলে পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে। এই গবেষণায় ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব স্ট্যাটিস্টিক্সের অধ্যাপক অম্লান বন্দোপাধ্যায় ও শিলাদ্রিশেখর দাসও গুরুত্বপূর্ণ সাহায্য করেছেন। এছাড়াও, আমেরিকার নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক তথা বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ছাত্র পৃথ্বীশ ঘোষ ব্যবহারিক কাজে সাহায্য করেছেন।
দেবাশিসবাবু বলেন, এই গবেষণায় উন্নত বিপদ পূর্বাভাস প্রযুক্তি ভারতের মতো দেশের দুর্যোগ প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ভবিষ্যতে, ভূ-তাত্ত্বিক ও রাসায়নিক তথ্য সহযোগে সংশ্লিষ্ট মডেলের ব্যবহার পূর্বাভাসের ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করবে। পরিসংখ্যানবিদ্যা ও ভূ-বিজ্ঞানের সমন্বয় পৃথিবীর আকস্মিক দুর্যোগগুলিকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।