আইআইটিতে পড়ার স্বপ্ন চণ্ডীপুরের হতদরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্রীর
বর্তমান | ০৫ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: ক্যানেলপাড়ে ঝুপড়িতে ফলের দোকান চালান বাবা। নিজেদের বাড়িও নেই। চণ্ডীপুরের কালিকাখালি গ্রামের এমনই হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে পান্থমিতা মাইতি মাধ্যমিকে ৬৭৮ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়েছে। পান্থমিতা শতকরা ৯৬.৮৫শতাংশ নম্বর পেয়েছে। সে উড়উড়ি জগন্নাথ স্মৃতি বালিকা বিদ্যাপীঠের ছাত্রী। ব্লকে মেয়েদের মধ্যে সেরা হয়েছে সে।
ছোটবেলা থেকেই পান্থমিতা মেধাবী ছাত্রী হিসেবে পরিচিত। আগামী দিনে আইআইটিতে পড়ার স্বপ্ন রয়েছে তার। কিন্তু ক্যানেলপাড়ে ফল বিক্রি করে মেয়ের উচ্চশিক্ষার খরচ জোগাড় করা কীভাবে সম্ভব হবে-তা নিয়ে তার বাবা সত্যজিৎ মাইতির চোখে ঘুম নেই। পান্থমিতার এই সাফল্যে পড়শিদের পাশাপাশি তার স্কুলের শিক্ষিকারাও খুশি। শুক্রবার ফলপ্রকাশের পর পান্থমিতাকে শুভেচ্ছা জানাতে অনেকেই তাদের ভাড়াবাড়িতে হাজির হন।
সত্যজিৎবাবু ও তাঁর স্ত্রী পম্পাদেবী জানান, তাঁরা ১৮বছর ধরে কালিকাখালিতে ভাড়াবাড়িতে বাস করেন। পান্থমিতা তাঁদের একমাত্র মেয়ে। সত্যজিৎবাবু আগে হাওড়ার একটি কারখানায় কাজ করতেন। কিন্তু শারীরিক সমস্যার কারণে সেই কাজ ছাড়তে বাধ্য হন। তারপর পাঁচবছর ধরে চণ্ডীপুর মার্কেটে মগরাজপুর ক্যানেলপাড়ে ঝুপড়ি বানিয়ে ফলের দোকান চালাচ্ছেন। সামান্য রোজগারে কোনওরকমে সংসার চলে। মেধাবী মেয়ের হাত ধরে একদিন দারিদ্র্য মোচনের স্বপ্ন দেখেন ওই দম্পতি। স্কুলে পান্থমিতা কখনও প্রথম, কখনও দ্বিতীয় হতো। মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৯৭-৯৮ শতাংশ নম্বর আসবে বলে আশা করেছিল। প্রত্যাশার তুলনায় নম্বর একটু কম বলে খানিকটা আফশোস রয়েছে। ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে আগ্রহী এই ছাত্রী।
পান্থমিতা বাংলায় ৯৭, ইংরেজিতে ৯৬, অঙ্কে ১০০, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৬, জীবনবিজ্ঞানে ৯৯, ইতিহাসে ৯৬ ও ভূগোলে ৯৪নম্বর পেয়েছে। সে বলে, আরও একটু ভালো নম্বর আশা করেছিলাম। তবে ৬৭৮পেয়ে আমি খুশি। ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। সত্যজিৎবাবু বলেন, আমাদের নিজস্ব বাড়ি নেই। ১৮বছর ধরে ভাড়াবাড়িতে থাকি। ফলের দোকান থেকে রোজগার সীমিত। তাই মেয়ের উচ্চশিক্ষা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে।
উড়উড়ি জগন্নাথ স্মৃতি বালিকা বিদ্যাপীঠের টিআইসি সরস্বতী মণ্ডল বলেন, পঞ্চম শ্রেণি থেকেই পান্থমিতা আমাদের স্কুলে পড়ছে। পরিবারে অনটন সত্ত্বেও সমস্ত ক্লাসে ও খুব ভালো রেজাল্ট করেছে। মাধ্যমিকেও আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো ফল করেছে। আমরা পান্থমিতার জন্য গর্বিত। আমাদের স্কুলের অন্যরা ওকে দেখে অনুপ্রাণিত হবে। পান্থমিতার জন্য আমাদের শুভেচ্ছা রইল।