• ভবিষ্যতে ডাক্তার হয়ে মায়ের শখ মেটাতে চায় মাধ্যমিকে ৬৮১ পাওয়া আরামবাগের অর্ঘ বেরা
    বর্তমান | ০৫ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আরামবাগ: মাত্র পাঁচ নম্বরের জন্য হাতছাড়া মাধ্যমিকে রাজ্যের মেধা তালিকা। ৬৮১ নম্বর পেয়ে স্কুলের সেরা আরামবাগের বড় ডোঙ্গল রমানাথ ইনস্টিটিউশনের ছাত্র অর্ঘ বেরা। ডোঙ্গলের বাসিন্দা অর্ঘ ছোটবেলা থেকেই মায়ের সঙ্গে মামাবাড়িতে বড় হচ্ছে। সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে বাবার সঙ্গে। মায়ের ইচ্ছে ছেলেকে মানুষ করার। তাই তিনি নিজে পরিশ্রম করে ছেলের পড়ার ও সংসারের খরচ জোগাচ্ছেন। অবশেষে মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল করে স্বপ্ন ছোঁয়ার পথে একধাপ এগল অর্ঘ। সে চিকিৎসক হয়ে মায়ের শখ মেটাতে চায়। সেই মতোই এখন থেকেই শুরু হয়েছে তার প্রস্তুতি। তার সাফল্যে খুশি পরিবার, এলাকার বাসিন্দা ও স্কুল কর্তৃপক্ষ। 

    অর্ঘ জানিয়েছে, মাধ্যমিকে পড়ার সময় দু’টি মাত্র টিউশন ছিল। দুই শিক্ষকের কাছেই বিজ্ঞান ও কলা বিভাগের বিষয়গুলি পড়ত সে। মাঝেমাঝে অবশ্য পড়া বুঝতে সাহায্য নিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ারও। অনেকের লেকচার শুনে সেখান থেকে জ্ঞান অর্জন করেছে সে। তাতেই সে ৬৮১ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। তার বিষয়ভিত্তিক প্রাপ্ত নম্বরগুলি হল বাংলায় ৯৬, ইংরেজিতে ৯৪, গণিত ১০০, পদার্থ বিজ্ঞানে ৯৮, জীবন বিজ্ঞানে ৯৮, ইতিহাসে ৯৭ ও ভূগোলে ৯৮। তার প্ৰিয় বিষয় পদার্থ বিজ্ঞান। পড়ার ফাঁকে অর্ঘ ছবি আঁকতে ভালোবাসে। তা রসঙ্গে কবাডি ও ক্রিকেট খেলাও তার প্রিয়। গোয়েন্দা গল্প পড়তেও ভালো লাগে তার। 

    অর্ঘ বলে, ছোটবেলা থেকে মায়ের স্নেহে বড় হয়েছি। মা-ই আমার সব। আমার জন্য কত পরিশ্রম করে। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আমি মায়ের শখ মেটাব। সেইজন্যই ভালোভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই। স্কুল ও পঞ্চায়েত থেকে কিছু বই পেয়ে পড়াশোনায় সাহায্য হয়েছে। অনেকেই পাশে দাঁড়িয়েছেন। 

    অর্ঘর মা সুস্মিতা বেরা বলেন, ছেলের তিন বছর বয়স থেকে বাপের বাড়িতে রয়েছি। অতীতের স্মৃতি আর মনে করতে চাই না। বাবা-মা আমাদের আগলে রেখেছেন। তাই তাঁদেরও কিছুটা সাহায্য করতে স্থানীয় একটি বেসরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়াই। দু’একটি টিউশন পড়াচ্ছি। মাঝে মাঝে সেলাইয়ের কাজও করি। তবে স্কুল ও টিউশনের শিক্ষকরা উপকার করেছেন। আগামী দিনে ছেলের পড়াশোনায় ব্যাপক খরচ রয়েছে। কীভাবে তার জোগান দেব, জানি না। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্ঘর দাদু গুণধর বেরার সামান্য কৃষিজমি রয়েছে। দিদা শেফালিদেবী গৃহবধূ। গুণধরবাবু হাটে সব্জি বিক্রি করে সংসার চালান। তাই হত দরিদ্র পরিবারের অর্ঘ এখন কীভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রত্যেকেই। বড় ডোঙ্গল রমানাথ ইনস্টিটিউশনের সহকারী তথা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পরেশ দুলে বলেন, অর্ঘ প্রথম থেকেই মেধাবী। উচ্চ মাধ্যমিকে তার ভর্তি ফি মকুব করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বইপত্রও দেওয়া হবে। স্কুলের প্রাক্তনীরাও ওর পড়াশোনায় সাহায্য করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। স্কুল সব ব্যাপারে ওর পাশে রয়েছে। • নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)