বিদ্যাসাগর সেতুর দুর্বল ২০টি কেবল পরিবর্তন শীঘ্রই, বন্ধ হবে লেন? ট্রাফিক ব্যবস্থা মসৃণ রাখতে পর্যালোচনা নবান্নের
বর্তমান | ০৫ মে ২০২৫
প্রীতেশ বসু, কলকাতা: প্রায় ৩৩ বছর আগে, ১৯৯২ সালের অক্টোবরে চালু হয়েছিল বিদ্যাসাগর সেতু (দ্বিতীয় হুগলি ব্রিজ)। এখান দিয়ে প্রতিদিন প্রায় এক লক্ষ যানবাহন যাতায়াত করে। কলকাতা-হাওড়ার সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে হাওড়া ব্রিজের পরেই আসে বিদ্যাসাগর সেতুর নাম। তাছাড়া, রাজ্য সরকারের প্রধান সচিবালয় ‘নবান্ন’-তে সরে আসার পর বিদ্যাসাগর সেতুর গুরুত্ব সবদিক থেকে আরও বেড়েছে। এই বিপুল গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সেতুর সুস্বাস্থ্য ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে তৎপর রাজ্য সরকার। তাই প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচে আমূল সংস্কারে হাত দিয়েছে তারা। সেতু মেরামতি ও রক্ষণাবেক্ষণে দক্ষ একটি জার্মান সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা কলকাতার একটি সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে গত এক বছর ধরে সেতুর বিভিন্ন অংশের সংস্কার করছে। এবার তারা সেতুর দুর্বল হয়ে পড়া ২০টি কেবল বদলের কাজে হাত দেবে। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিভাষায় এগুলিকে বলে ‘স্টে কেবল’, যেগুলি সেতুকে উপরের দিকে টান দিয়ে রেখেছে।
চলতি সংস্কার-পর্বে এই কাজই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই বিপত্তি এড়াতে সবরকম সতর্কতা অবলম্বন করতে চাইছে নবান্ন। আগামী এক-দু’সপ্তাহের মধ্যেই রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষমহল ভারপ্রাপ্ত সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে এনিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছেন বলে খবর। এইচআরবিসি এবং পুলিসের পদস্থ কর্তাদেরও সেখানে উপস্থিত থাকার কথা। সূত্রের খবর, কেবলগুলি কীভাবে পরিবর্তন করা হবে, কী কী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন—সেই সংক্রান্ত একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন পেশ করবে জার্মান সংস্থা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এই ধরনের কাজের সময় কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা হয়েছে, তাও দেখানো হবে। রাজ্যের সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, ইতিমধ্যে ব্রিজের নীচের অংশের ১৬টি ‘হোল্ডিং ডাউন কেবল’ পরিবর্তনের কাজ শেষ হয়েছে। এই কাজের সময় সেতুর দু’টি লেনে যান চলাচল বন্ধ রাখতে হয়েছিল। বাকি চারটি লেন দিয়ে স্বাভাবিক ছিল গাড়ি চলাচল। স্টে কেবল পরিবর্তনের সময়ও এক বা একাধিক লেন বন্ধ করার প্রয়োজন হতে পারে। ওই সময় সেতু দিয়ে ট্রাক চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রাখা নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। তবে জানা গিয়েছে, সব ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে শীর্ষস্তরের বৈঠকে। সেই অনুযায়ী রূপরেখা ঠিক করবে পুলিস এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর। দুর্বল কেবলগুলি পরিবর্তনের কাজ শেষ হলে ৮২৩ মিটার দীর্ঘ সেতুর বিয়ারিং বদল শুরু হবে। তখন কয়েকদিন ১২ ঘণ্টা করে সেতু দিয়ে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সেতু মেরামতির কাজ সম্পূর্ণ শেষ হতে আরও প্রায় ১৫ মাস সময় লাগতে পারে।