নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: ১৮২৩ সাল। দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি ঢালে চা বাগিচা গড়ে তোলার আগে ব্রিটিশরা পরীক্ষামূলকভাবে চা উৎপাদন শুরু করেছিল শিবপুর বটানিক্যাল গার্ডেনে। সেই উদ্যোগে সাফল্যও এসেছিল। কিন্তু পরিচর্যার অভাব, রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি সহ একাধিক কারণে একটা সময় আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস বটানিক্যাল গার্ডেন থেকে হারিয়ে যায় চা বাগান। প্রথম চা উৎপাদনের সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে বটানিক্যাল গার্ডেন কর্তৃপক্ষ। লোয়ার দার্জিলিং এলাকা থেকে নিয়ে আসা চা গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে বটানিক্যাল গার্ডেনে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে লোয়ার দার্জিলিং ও ডুয়ার্সের কিছু এলাকা থেকে চা গাছের চারাগুলি আনা হয়। জানা গিয়েছে, মূলত টিবি ২৫, টিবি ২৬ সহ কয়েকটি প্রজাতির চা গাছ লাগানো হয়েছে বটানিক্যাল গার্ডেনে। তবে কাজটা খুব সহজ ছিল না। কারণ, চা বাগিচা বেড়ে ওঠার স্বাভাবিক পরিবেশ হল পাহাড়ি আবহাওয়া এবং সেখানকার মতো মাটির গুণাগুণ। এগুলির কোনওটাই নেই হাওড়ায়। তাই প্রথমে চা চাষের উপযুক্ত মাটি তৈরিতে নজর দেয় বটানিক্যাল গার্ডেন কর্তৃপক্ষ। মাটি পরীক্ষা করে বোঝার চেষ্টা হয়, তা চা গাছ রোপণের জন্য কতখানি উপযুক্ত। এরপর গার্ডেনের ভিতর একটি জায়গাকে চিহ্নিত করা হয়। সেই জায়গাটি টিলার মতো উঁচু করে অ্যালুমিনিয়াম সালফেট ও অ্যালুমিনিয়াম প্যারালাইট দিয়ে মাটিকে পাহাড়ের ‘পটজল মৃত্তিকা’র সমমানের করে তোলা হয়। এরপর রোপণ করা হয় চা গাছের চারাগুলি। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে চা বাগানে জল দেওয়ার জন্য বসানো হয়েছে অটো-স্প্রিঙ্কলার। শুধু তাই নয়, চা বাগানের রক্ষণাবেক্ষণ ও নজরদারির জন্য একটি পৃথক বিভাগ তৈরি করেছে উদ্যান কর্তৃপক্ষ। এসবের ফলশ্রুতিতে গত দু’মাসে একটু একটু করে মাথা তুলছে সবুজ চা বাগিচা।
বটানিক্যাল গার্ডেনের জয়েন্ট ডিরেক্টর দেবেন্দ্র সিং বলেন, ‘আগামী বর্ষায় চা গাছগুলি বৃষ্টির ঝাপটা সহ্য করতে পারলেই বোঝা যাবে, আমাদের এই উদ্যোগের ভবিষ্যৎ কী। তবে প্রখর রোদেও যেভাবে প্রায় ৮০ শতাংশ গাছ প্রতিকূলতা কাটিয়ে বেড়ে উঠছে, তাতে আমরা আশাবাদী। এখানেই ব্রিটিশরা প্রথম চা উৎপাদন শুরু করেছিল। সেই স্মৃতিকে ফিরিয়ে আনতে চাইছি আমরা।’ চা উৎপাদনের জন্য তৈরি করা উঁচু ঢিপির পাশেই তৈরি করা হয়েছে একটি অস্থায়ী ছোট জলাশয়। বৃষ্টি পড়লে চা গাছের গোড়ায় যাতে জল দাঁড়িয়ে না যায়, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। ঢিপির ঢাল বেয়ে জল সরাসরি গড়িয়ে পড়বে জলাশয়ে। কর্তৃপক্ষের দাবি, এই উদ্যানে এলে প্রায় তিন হাজার প্রজাতির ৩০ হাজার বিভিন্ন ধরনের গাছ চাক্ষুষ করতে পারবে সাধারণ মানুষ। তার উপর এখানে চা উৎপাদন শুরু হলে নিঃসন্দেহে তা বাড়তি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে বলে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ।