নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: গ্রেপ্তার হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরও ভারতে বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় কোনও নথি পেশ করতে পারেননি পাক নাগরিক তথা চন্দননগরের গৃহবধূ ফতেমা বিবি। গঙ্গাপাড়ের ঐতিহ্যের শহরে এখন এটাই অন্যতম চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। চন্দননগরের কুঠির মাঠের বাসিন্দা বছর ৬০-এর ফতেমা বিবি আদতে পাকিস্তানের বাসিন্দা জানার পর বিস্মিত সবাই। শনিবার স্ত্রী গ্রেপ্তার হওয়ার পরেই কার্যত লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছেন স্বামী তথা স্থানীয় বেকারির মালিক মোজাফফর মল্লিক ওরফে রাজু। রবিবারও তাঁকে এলাকায় দেখা যায়নি। পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে ফতেমার দুই মেয়ে আন্দোলন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরুর কথা ভাবছেন।
পাশাপাশি, ফতেমার নামে ভারতীয় ভোটার কার্ড থাকার দাবি ঘিরেও তোলপাড় শুরু হয়েছে। ১৯৮০ সালে পর্যটক ভিসা নিয়ে পাকিস্তান থেকে ভারতের হরিপালের নালিকুলে এসেছিলেন ফতেমার বাবা। সেই বছরই চন্দননগরের কুঠির মাঠের বেকারি ব্যবসায়ী মোজাফফরের সঙ্গে তাঁর বছর ১৫-র মেয়ে ফতেমার বিয়ে দেন তিনি। তারপর ৪৫ বছর কেটে গিয়েছে। ভারতীয় নাগরিকত্ব নেওয়ার জন্য কোনও কিছুই করা হয়নি। অথচ, চন্দননগরের এই বধূর কাছে রয়েছে ভারকের ভোটার কার্ড। রবিবার সমাজ মাধ্যমেও চন্দননগর শহরকেন্দ্রিক একাধিক গ্রুপে নাগরিকরা এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ মন্তব্য করেছেন, ‘একটা বৈধ নথি পেতে ৪৫ বছর সময় লাগে কি?’ এক মহিলা নাগরিকের প্রশ্ন, ‘পাকিস্তানের নাগরিকের ভারতীয় ভোটার কার্ড হয় কী করে? সেই পদ্ধতি যে অবৈধ, তা বোঝেননি? নাকি ইচ্ছে করেই করেছিলেন?’ এসব প্রশ্নের উত্তর প্রশাসন বা পরিবার, কোনও মহল থেকেই মেলেনি। ফতেমার দুই মেয়ে বিবাহিত। তাঁরা এদিনও সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেননি। তবে পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এক ব্যক্তি বলেন, ‘ফতেমা হুগলি জেলার নালিকুলেই জন্মেছেন। তাঁর জন্মের শংসাপত্র ছিল। তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ওঁরা একবার আদালতেও গিয়েছিলেন। পাকিস্তানে ফতেমার কোনও আত্মীয়স্বজন নেই।’ চন্দননগর পুলিস কমিশনারেটের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘একজন বিদেশি নাগরিকের কাছে এদেশে থাকার জন্য কোনও বৈধ নথি মেলেনি। তাই যে পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিল, সেটাই করা হয়েছে। বিষয়টি এখন আদালতের বিচারাধীন।’
শনিবার দুপুর থেকে শান্ত চন্দননগরে হইচই শুরু হয়েছিল ফতেমা বিবিকে ঘিরে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সকালেই পুলিস কুঠির মাঠ এলাকায় অভিযান চালায়। এদেশে বসবাসের বৈধ নথি পেশ করতে না পারায় দুপুরে ফতেমা বিবিকে পুলিস গ্রেপ্তার করে। তাঁকে চন্দননগর আদালতে পেশ করা হলে আদালত তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের আদেশ দেয়।