রোগ সারছে না। তাই, দাওয়াই দিল পুর দপ্তর। আগুন লাগলেও বিপদ থেকে যাতে রক্ষা পাওয়া যায়, তার দাওয়াই।
বছর খানেক আগে এক রাতে আগুন লাগে কসবার একটি বহুতল আবাসনের একতলায়। কিছুক্ষণের মধ্যে সেই আগুন তিনতলায় পৌঁছে যায়। আগুন থেকে বাঁচতে ছাদে যাওয়ার চেষ্টা করেন আবাসনের বাসিন্দারা। কিন্তু তাঁরা ছাদে যেতে পারেননি। কারণ, ছাদের দরজা বন্ধ ছিল। চাবি কার কাছে রয়েছে, সেটা জানাও যায়নি সে রাতে। ওই ঘটনায় শেষমেশ কারও ক্ষতি হয়নি, একটুর জন্য রক্ষা পান বাসিন্দারা।
তবে ১৫ বছর আগে পার্ক স্ট্রিটের বহুতল স্টিফেন কোর্টে অগ্নিকাণ্ডের সময়ে ছাদের দরজা একই ভাবে বন্ধ থাকায় বহু মানুষকে বেঘোরে মরতে হয়েছিল। গত মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল রাতে মেছুয়া ফলপট্টির ‘হোটেল ঋতুরাজ’–এ আগুন ধরলে অনেকেই ছাদে যেতে পারেননি। তার কারণ, ছাদে ওঠার দু’টি সিঁড়ির একটিতে জিনিসপত্র বোঝাই করা ছিল আর দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না–হওয়া দ্বিতীয় সিঁড়ির দরজায় শাটার নামানো ছিল— চাবি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বার বার বলা সত্ত্বেও বহুতলের ছাদ খালি রাখা, ছাদের দরজা খোলা রাখা এবং ছাদে ওঠার সিঁড়ি ফাঁকা রাখা হচ্ছে না অনেক জায়গাতেই। কিছুতেই সারছে না ওই রোগ। এ বার তাই রোগ সারাতে পুর দপ্তর কঠোর পদক্ষেপ করেছে। ছাদে যাতে জিনিসপত্র বোঝাই করা না–থাকে, ছাদের দরজা যাতে খোলা থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে পুর দপ্তর রাজ্যের সব ক’টি পুরনিগম ও পুরসভাকে নির্দেশিকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুর দপ্তরের বক্তব্য, কমন প্যাসেজ, ছাদ ‘দখল করে রাখা’ আর বরদাস্ত করা হবে না। সেখানে বহুতলের সবাই যাতে অবাধে যাতায়াত করতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
পুর দপ্তর সূত্রের খবর, ওই নির্দেশিকায় জানানো হবে যে, ছাদ এবং বহুতলের যাবতীয় কমন প্যাসেজ সব সময়ের জন্য ফাঁকা রাখতে হবে। ছাদের দরজা বা ছাদে যাওয়ার সিঁড়ির দরজায় তালা দেওয়া যাবে না। রাতে নিরাপত্তার কারণে ওই দরজা তালাবন্ধ থাকলেও সেই চাবি কার কাছে রয়েছে, সেটা আবাসিকদের সবাইকে জানিয়ে রাখতে হবে। যাতে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে প্রত্যেকে ছাদে আশ্রয় নিতে পারেন।
পুর দপ্তরের আওতায় থাকা সব ক’টি আবাসন কর্তৃপক্ষকে তো এটা জানানো হবেই, সেই সঙ্গে ছাদ ফাঁকা রাখার কথা ডেভেলপার, প্রোমোটারদেরও জানাতে বলা হয়েছে। এই নিয়ম সবাই মানছেন কি না, সে দিকে নজর রাখতে হবে স্থানীয় কাউন্সিলারের পাশাপাশি পুরসভার অফিসারদেরও।
বড় আবাসনগুলোর তুলনায় ছোট আবাসনগুলোর ছাদের দরজায় তালা দেওয়ার প্রবণতা বেশি। তাই, ওই সব আবাসনে বাড়তি নজরদারির কথা বলা হয়েছে। কেন এই নির্দেশিকা মেনে চলা জরুরি, সে বিষয়েও প্রচার করার কথা বলা হয়েছে পুরসভাগুলোকে।
দমকলের এক কর্তা বলেন, ‘স্টিফেন কোর্ট ও মেছুয়া ফলপট্টির হোটেলে আগুন এবং অগ্নিকাণ্ডের আরও কিছু ঘটনায় ছাদের দরজা বন্ধ থাকার কারণে অনেকের প্রাণ গিয়েছে। বহু আবাসনেই ছাদের দরজা সব সময়ের জন্য বন্ধ করে রাখার একটা প্রবণতা দেখা যায়। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।’ পুর দপ্তরের যে নির্দেশিকা আসতে চলেছে, তা নিয়ে দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান হরিন্দর সিং বলেন, ‘এটা মানতেই হবে। মানুষের সুরক্ষা সবার আগে। তার জন্যই নতুন নিয়ম চালু করা হচ্ছে।’