এই সময়: দু’সপ্তাহ পার! কবে ধরা পড়বে কাশ্মীরের পহেলগামে বৈসরনে মামলার নেপথ্যে থাকা জঙ্গিরা? ঘণ্টাখানেক ধরে বেছে বেছে গুলি চালানোর পরে, কী ভাবে তারা সেখান থেকে চলে গেল? এই সব প্রশ্নের জবাব চান জঙ্গি হামলায় নিহত বেহালার সখেরবাজারের বাসিন্দা সমীর গুহ–র স্ত্রী শবরী।
রবিবার সাংবাদিকদের ডেকে তাঁর প্রশ্ন, ‘সম্পূর্ণ গোয়েন্দা ব্যর্থতা। এক ঘণ্টা কোথায় ছিল সেনাবাহিনী এবং পুলিশ? যারা এই কাজ করছে, তাদের এমন শাস্তি চাই, যেন আর এ রকম ঘটনা না ঘটে। প্রচার করা হচ্ছিল, কাশ্মীর শান্ত। এটা যদি শান্ত হয়, তা হলে অশান্ত কোনটা?’
জানা গিয়েছে, কাশ্মীরে পর্যটকদের নিশানা করে জঙ্গিরা যে হামলা চালাতে পারে, সেই সতর্কবার্তা পহেলগাম হামলার আগেই পাঠানো হয়েছিল গোয়েন্দা এজেন্সিগুলির তরফে। বিশেষ করে শ্রীনগরের উপকণ্ঠে জ়াবারওয়ান রেঞ্জের পাদদেশে যে পর্যটকেরা যাচ্ছিলেন, তাঁদের বিষয়ে সতর্কবার্তা গোয়েন্দাদের তরফে দেওয়া হয়েছিল।
সেই মতো দাচিগাম, নিশাতের মতো এলাকায় নিরাপত্তার কড়াকড়ি করা হয়। সমান্তরাল ভাবে চলতে থাকে জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশিও। প্রায় দু’সপ্তাহ তল্লাশি অভিযান চালিয়েও কিছু না-মেলায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয় ২২ এপ্রিল। আর সেই দিনই বৈসরনে হামলা চালায় জঙ্গিরা।
গত দু’সপ্তাহে নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়েছেন তিনি। কিন্তু, জঙ্গি হামলার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় অথবা তাদের মদতদাতাদের চিহ্নিত করে কড়া পদক্ষেপ না করায় এ দিন উষ্মা প্রকাশ করেছেন শবরী। ওই ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারের গোয়েন্দা ব্যর্থতাকেই দায়ি করে তিনি বলেন, ‘বৈসরনে ঢোকা–বেরোনোর পথ ওরা আটকে রেখেছিল। সে কারণে কেউ বেরোতে পারেননি। পরের দিন আমাদের ফেরার কথা ছিল। আমাদের সঙ্গে একজন বিদেশিও ছিলেন। চোখের সামনে ধর্ম চিহ্নিত করে গুলি করা হলো।’ সমীরের শ্যালক সুব্রত ঘোষের বক্তব্য, ‘দু’সপ্তাহ হয়ে গেল, এখনও খঁুজে বের করা গেল না? আমরা শাস্তি চাই।’
সে দিন গুলি চলার সময়ে এ দিক–ও দিক ছোটাছুটি করেছিলেন সকলেই। তখনই পায়ে গুরুতর চোট পান শবরী। সেই ব্যান্ডেজ এখনও রয়েছে। এ দিন শবরী বলেন, ‘সেনাবাহিনী ছিল না। আমার মেয়ে এ সব দেখে বলছিল, তুমি শুয়ে পড়ো মা। আমাদের মেরে দেবে। সেনাবাহিনীর পোশাকে মুখ ঢেকে ওরা এসেছিল। আধ ঘণ্টা–৪৫ মিনিট ধরে তাণ্ডব চালিয়ে। গেট বন্ধ করে গিয়েছিল ওরা।’
তাঁর অভিযোগ, ‘আমাদের নামে ইচ্ছাকৃত কুৎসাও করা হচ্ছে। কেউ রটাচ্ছে, বিমা কোম্পানি থেকে আমরা নাকি এক কোটি ৭০ লক্ষ টাকা পেয়েছিলাম। সেটা ভুল। আমরা ১০ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পেয়েছি। যাঁরা এমন করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।’ সমীর গুহ কেন্দ্রীয় সরকারের সিনিয়র স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিসার পদে কলকাতায় কর্মরত ছিলেন।
শবরী বলেন, ‘আমার স্বামী পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন। সরকারের কাছে আমার আবেদন, যদি সাহায্য করতে চান, তা হলে আমার স্বামীর চাকরিটা আমাকে দিন। আমার মেয়ে শুভাঙ্গী পড়াশোনা করছে।’
পহেলগামের হামলায় জঙ্গিরা ধরা না পড়লেও, কাশ্মীর জুড়ে এখন সেনার বুটের শব্দ। পাকিস্তানকে চাপে রাখতে কূটনৈতিক পদক্ষেপ করছে ভারত। তারপরেও ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিচ্ছে প্রশ্ন, কবে ধরা পড়বে হামলাকারীরা? ঘটনার পরে এত দেরি করে কেন পৌঁছল পুলিশ ও সেনা?