• ৪৫ বছর বঙ্গে থাকার পরে গ্রেপ্তার ‘পাকিস্তানি’ ফতেমা, ১৪ দিনের হেফাজত
    এই সময় | ০৫ মে ২০২৫
  • প্রদীপ চক্রবর্তী, চন্দননগর

    চন্দননগরেই জন্ম। পরে বাবা কর্মসূত্রে চলে যান অধুনা পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে। সেই থেকে পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নেওয়া। তার পরে ১৯৮০–তে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে তিনি এসেছিলেন তাঁর জন্মস্থানে। সেই থেকে ভারতেই থেকে গিয়েছেন ফতেমা বিবি।

    ৪৫ বছরেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। তাঁর কাছে রয়েছে এখানকার আধার কার্ড, ভোটার কার্ড। কিন্তু নিজের ট্যুরিস্ট ভিসাকে বদলানোর কোনও চেষ্টা করেননি আজ পর্যন্ত। তাই পহেলগামের ঘটনার পরে তিনি আজ ভারতীয় প্রশাসনের চোখে একজন ‘বিদেশি’ ছাড়া আর কেউই নন।

    চন্দননগরের কুঠির মাঠে তাঁর স্বামীর বাড়ি থেকে পাক নাগরিক ফতেমা বিবিকে শনিবারই গ্রেপ্তার করে চন্দননগর থানার পুলিশ। রবিবার চন্দননগর আদালতে পেশ করা হলে বিচারক ফতেমাকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এক পাক নাগরিক কী ভাবে এ দেশের ভোটার হলেন, সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলছে রাজনৈতিক দলগুলো।

    দিনভর ষাটোর্ধ্ব ফতেমাকে নিয়ে চন্দননগরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। ফতেমার বিষয়টি মানবিক দিক থেকে দেখার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন তাঁর প্রতিবেশীরাও।

    প্রায় চার দশকের বেশি সময় ধরে ফতেমা ভারতে রয়েছেন। তিনি ভোট দেন, সব ধরনের পরিচয়পত্রও রয়েছে। আইন মেনেই মুজফফর মল্লিকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। দু’জনের সন্তানও রয়েছে। ফতেমার বক্তব্য, এখন তাঁকে পাকিস্তানে পাঠালে তিনি যাবেন কার কাছে? সেখানে তাঁর কেউ নেই। ফতেমার পরিবার তাঁর গ্রেপ্তারের দিনই দাবি করেছিল, বয়সজনিত কারণে নানা ব্যাধি আছে তাঁর। হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করতে হবে। ওষুধ ছাড়া এক মুহূর্ত চলে না। এই অবস্থায় একজন মানুষ কী করে জেলে থাকবেন!

    চন্দননগর পুর নিগমের ডেপুটি মেয়র মুন্না আগরওয়াল বলেন, ‘৪৫ বছর আগে এই বিষয়টি খোঁজখবর করা উচিত ছিল। ১৯৮০–তে আমাদের সরকার ছিল না। যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা বলতে পারবে কী ভাবে ভোটার লিস্টে ওঁর নাম উঠল। যে হেতু উনি ৪৫ বছর ধরে এখানে সংসার করছেন, তাই ট্রাইব্যুনালে মানবিক দিক থেকে এর মীমাংসা করা হবে। ফতেমার কোনও অবৈধ কার্যকলাপ নেই। সেই দিক থেকে, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সরকার বিবেচনা করবে। ১৯৮০–তে যখন এসেছিলেন তিনি, বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় ছিল। আর আধার কার্ড, ভোটার কার্ডের ব্যাপারে ভারত সরকার এবং নির্বাচন কমিশন বলতে পারবে।’

    চন্দননগরের সিপিএম এরিয়া কমিটির সম্পাদক ঐকতান দাশগুপ্ত বলেন, ‘আমাদের দেশে ১৯৮৫ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত একাধিক সরকারের পরিবর্তন হয়েছে। এটা রাজ্যের কোনও বিষয় নয়। দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বড় গাফিলতি থেকে গিয়েছে, যা তারা অস্বীকার করতে পারে না। রাজ্যকে নোটিফিকেশন দিলে তারা সেই অনুযায়ী কাজ করে। ট্যুরিস্ট ভিসায় আসা কেউ ভিসা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও এতগুলো বছর কী ভাবে এ দেশে থেকে গেলেন, এর জবাব তো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকই দেবে।’

    বিজেপি নেতা গোপাল চৌবে বলেন, ‘শুধু চন্দননগর নয়, আশপাশে উর্দিবাজার, চাঁপদানি, ভদ্রেশ্বর, বিলকুলিতে খুঁজলে অনেক পাক নাগরিক পাওয়া যাবে। আমার আবেদন, এঁদের সবাইকে চিহ্নিত করা দরকার।’

  • Link to this news (এই সময়)