• মোবাইল নয়, গরমের ছুটিতে বই-ই হোক সই, উচ্ছ্বসিত পড়ুয়ারাও
    এই সময় | ০৫ মে ২০২৫
  • সমীর মণ্ডল ■ মেদিনীপুর

    নিন্দুকদের অনেকেই বলেন— বই, বই বই আর কিছু নয়। তাঁরা ভুল বলেন বইকি! গরমের ছুটিতে কে কোন বই পড়বে, তা নিয়ে স্কুলের লাইব্রেরিতে আক্ষরিক অর্থেই উপচে পড়ল ভিড়! সেই ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেলেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এমনই দৃশ্য দেখা গেল পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন ভাগবত চরণ হাইস্কুলে।

    কয়েকদিন ধরেই স্কুলে রটে গিয়েছিল বার্তাটা— 'বই পড়ো, জিতে নাও পুরস্কার।' ব্যস! ক্লাস সিক্সের সৃষ্টি সিংহ পাশে বসা সহপাঠীকে কনুইয়ের আলতো ধাক্কা দিয়ে জানতে চাইল, 'হ্যাঁ রে, তুই কী বই নিবি?' উত্তরের অপেক্ষা না-করে সে নিজেই বলে চলল, 'পঞ্চতন্ত্রের গল্প আমার আগেই পড়া হয়ে গিয়েছে। এ বার ছুটিতে টিনটিন শেষ করবই।'

    বুধবার থেকে স্কুলে গরমের ছুটি পড়ে গিয়েছে। ঠিক তার আগের ক'দিন থেকে লাইব্রেরি গিয়ে বই সংগ্রহ করেছে পড়ুয়ারা। কেউ নিয়েছে কিশোর গল্প সমগ্র, কারও হাতে ফেলুদা, কেউ সংগ্রহ করেছে পাণ্ডব গোয়েন্দা। তা ছাড়া বইয়ের তালিকায় ছিল টেনিদা, ঠাকুরমার ঝুলি, বীরবল, এবং মোল্লা নাসিরুদ্দিন। ও হ্যাঁ, সৃষ্টি ভিড় ঠেলে টিনটিন পাওয়ার পরে জয়ীর হাসিও হেসেছে।

    ভাগবত চরণ হাইস্কুল বরাবর বেশ অভিনব পদক্ষেপ করে। প্রধানশিক্ষক অরবিন্দ দাস স্কুলের দায়িত্ব নেওয়ার পরে সেই অভিনবত্ব বেড়েছে বই কমেনি। 'কত চিঠি লেখে লোকে...' এখন অতীত। তবে স্কুলের উদ্যোগে এই স্কুলের পড়ুয়ারা নিয়মিত চিঠি লেখে। সে চিঠি ডাকে না-পাঠানো হলেও চিঠি লেখায় বেশ দড় স্কুলের পড়ুয়ারা। গাছকে ভালোবাসে রাখিও পরায় তারা। প্রধানশিক্ষক অরবিন্দ দাস বলছেন, 'আমাদের স্কুলের পড়ুয়ারা নিয়মিত লাইব্রেরি থেকে বই পড়ে। বই পড়ায় উৎসাহ আরও বাড়াতে এ বার পুরস্কারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। গরমের ছুটিতে পড়ুয়ারা সংগৃহীত বই পড়বে। ছুটি শেষে তাদের সেই বই থেকে প্রশ্ন করা হবে। সঠিক উত্তরদাতাদের পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হবে বই কিংবা পেন।'

    অরবিন্দের সংযোজন, 'আমরা চেয়েছি, ছুটিতে শুধু টইটই করে ঘুরে না-বেড়িয়ে কিংবা মোবাইল দেখে সময় নষ্ট না-করে পড়ুয়ারা বই পড়ুক। গরমের ছুটির বেশ কয়েকদিন আগে থেকে বই সংগ্রহ করতে পড়ুয়াদের ভিড় দেখে আমরা অভিভূত। শুধুমাত্র মঙ্গলবারেই লাইব্রেরি থেকে ৩২৮ জন পড়ুয়া বই সংগ্রহ করেছে। সেই ভিড় সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।'

    স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাতশো। স্কুল কর্তৃপক্ষ নজর রেখেছিলেন, প্রত্যেক পড়ুয়ার হাতে যেন অন্তত একটা করে হলেও বই পৌঁছয়। শিক্ষক, শিক্ষিকারা সেই মতো একটি বই-তালিকাও তৈরি করে রেখেছিলেন।

    অভিভাবকেরাও স্কুলের এমন অভিনব উদ্যোগে খুশি। মৃন্ময়ী পাত্র নামে এক অভিভাবিকার কথায়, 'ছুটি পেলেই মেয়েটা মোবাইল আর টিভি-র স্ক্রিন ছেড়ে উঠতেই চায় না। এ বার অন্তত বই পড়বে। স্কুলের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।'

    নবম শ্রেণির প্রিয়ব্রত বারিক, অষ্টম শ্রেণির শ্রুতি দাসদের কথায়, 'আমরা নিয়মিত লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে পড়ি। কিন্তু এ বার খুব খুঁটিয়ে পড়ব। পুরস্কার জিততে হবে যে!' নাছোড়বান্দা সপ্তম শ্রেণির অনুষ্কা পাত্রও। সে বলছে, 'পুরস্কার তো আমি জিতবই!' মুচকি হেসে প্রধানশিক্ষক বলছেন, 'বই পড়ার ক্ষেত্রে এমন রেষারেষি যত বাড়ে ততই ভালো। কী বলেন?'

  • Link to this news (এই সময়)