• মুর্শিদাবাদ নিয়ে কেন্দ্রকে রিপোর্ট রাজ্যপালের
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৫ মে ২০২৫
  • মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ আইনকে ঘিরে অশান্তির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে পেশ করা রিপোর্টে রাষ্ট্রপতি শাসনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সরাসরি রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সুপারিশ না করলেও, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে যে বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারির কথা কেন্দ্রীয় সরকার ভাবতে পারে তা উল্লেখ করেছেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। মুর্শিদাবাদ থেকে ফিরে আসার পরেই কেন্দ্রীয় সরকারকে এই রিপোর্ট পাঠান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ওই রিপোর্টে সংবিধানের ৩৫৬ অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করেন তিনি। রাজভবন সূত্রে খবর, অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগেই কেন্দ্রকে ওই রিপোর্ট পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল।

    জানা গিয়েছে, রিপোর্টে রাজ্যপাল বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলির আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন এবং ওই সমস্ত এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর ফাঁড়ি নির্মাণ-সহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জানান, মুর্শিদাবাদের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন শান্তি বজায় না রাখতে পারলে কেন্দ্রীয় সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে। সীমান্ত লাগোয়া যে সমস্ত জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে সেই সমস্ত জায়গায় বিএসএফ বা কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা যেতে পারে। রিপোর্টে তিনি সংবিধানের ৩৫৬ ধারার কথাও উল্লেখ করেন। তবে মন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতি শাসন জারির প্রস্তাব করেননি। তিনি বলতে চেয়েছেন, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে সংবিধানের ৩৫৬ ধারা লাগু করার বিকল্প কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আছে। অন্যদিকে রিপোর্টে রাজ্যপালের আশঙ্কা, মুর্শিদাবাদে যে হিংসার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার প্রভাব রাজ্যের অন্যত্র পড়তে পারে। এই প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত এমন ব্যবস্থা করা যাতে আইনের শাসনের প্রতি জনগণের আস্থা তৈরি হয়।

    এই বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেছেন, ‘রাজ্যপাল সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। এটা তাঁর পলিটিক্যাল অ্যাসাইনমেন্ট। তিনি জানেন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। রাজ্যপাল এটাও ভালোভাবে জানেন যে, সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্ব বিএসএফ-এর। যদি কেউ এদেশে ঢুকে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করে তা নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব বিএসএফের তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের, যার দায়িত্বে রয়েছেন অমিত শাহ। ফলে রাজ্যপালের তাঁর রিপোর্টে বলা উচিত ছিল বিএসএফ যেন সঠিকভাবে নিজের কাজটা করে। এই রিপোর্ট পেশ করে তিনি বিজেপিকে খুশি করার চেষ্টা করেছেন।’

    সংশোধিত ওয়াকফ আইনকে কেন্দ্র করে এপ্রিল মাসের শুরু থেকে অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছিল মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু অঞ্চলে।অশান্ত হয়ে ওঠে শামসেরগঞ্জ, ধুলিয়ান, সুতি। জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, একাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইঁটবৃষ্টির মতো ঘটনা ঘটে। অশান্তির জেরে প্রাণ যায় ৩ জনের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়।

    মুর্শিদাবাদের অশান্তিতে যাঁরা ঘরছাড়া হয়েছিলেন, তাঁদের একাংশকে নিয়ে রাজভবনে যান বিজেপির রাজ্যস্তরের প্রতিনিধিরা। শামসেরগঞ্জ এবং ধুলিয়ানে গিয়ে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে আসার জন্যও রাজ্যপালকে অনুরোধ করেন তাঁরা। সেই অনুরোধ রক্ষা করে এপ্রিলের মাঝামাঝি মুর্শিদাবাদে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। সেখান থেকে ফেরার পর তিনি এই রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)