• সংখ্যালঘু-সংস্কৃতি কেন্দ্রের কী হবে, জানেন না কেউ
    আনন্দবাজার | ০৫ মে ২০২৫
  • দিঘার জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্র সেজে ওঠার পটভূমিতে কিছু প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। ২০২৪-২৫ সালের রাজ্য বাজেটে একটি সংখ্যালঘু সংস্কৃতি উন্নয়ন কেন্দ্রের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। দিঘার ২৫০ কোটি টাকার সুদৃশ্য মন্দিরের উদ্বোধন হয়ে গেলেও সংখ্যালঘুদের সংস্কৃতি কেন্দ্রে কোথায় কী হবে— এক ফোঁটা স্পষ্ট হল না। সরকারি সূত্রের খবর, ওই সংস্কৃতি কেন্দ্রে একই সঙ্গে ছ’টি ধর্মীয় গোষ্ঠী মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, পার্শিদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য মেলে ধরার কথা ছিল।

    বিষয়টি নিয়ে সদুত্তর মেলেনি সরকারি কর্তাদের কাছে। তবে রাজ্য সংখ্যালঘু বিষয়ক দফতরের সচিব পিবি সেলিম রবিবার বলেন, ‘‘দিল্লির ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল সেন্টারের আদলে কিছু গড়ার ভাবনা রয়েছে। এখানে ছ’টি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীরই প্রতিনিধিত্ব থাকবে।’’ দু’বছর আগের বাজেট প্রস্তাবে বিভিন্ন ধর্মের সংস্কৃতি কেন্দ্রটিতে কয়েকটি প্রদর্শনী কক্ষ, সম্মেলন স্থল ছাড়াও বিভিন্ন সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর তরুণদের কর্মসংস্থানে কিছু তালিম কেন্দ্রের কথাও ভাবা হয়।

    এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুর্শিদাবাদ সফরের আবহে এ সব পুরনো পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অনেকের প্রশ্ন, রাজ্য বাজেটে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে বিপুল বরাদ্দ হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন অস্পষ্ট। প্রতীচী ট্রাস্টের গবেষক সাবির আহমেদ বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু উন্নয়ন খাতে রাজ্যের বরাদ্দ ৫৫০০ কোটির বেশি। যা কেন্দ্রের বাজেটের থেকেও বেশি। এটা প্রশংসনীয়। কিন্তু বাস্তবে কোথায় কী খরচ হল, তা বিশ্লেষণ দরকার।’’ ইদানীংকালে এ দেশে এক ধাঁচের ধর্ম-সংস্কৃতি চাপানোর প্রবণতার মধ্যেও সংখ্যালঘুদের সংস্কৃতি কেন্দ্র গড়ে তোলা জরুরি বলে মনে করছেন অনেকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক রাজ্যেশ্বের সিংহ বলেন, ‘‘দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের সঙ্গে পর্যটনের যোগ থাকতে পারে। কিন্তুওড়িশার জগন্নাথ আরাধনার সঙ্গে কিছু মিল ছাড়া এর সঙ্গে বাংলার জগন্নাথ চর্চার ধারার যোগ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিভিন্ন সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সংস্কৃতির প্রসারের মধ্যে বরং দেশের সাংস্কৃতিক বহুত্বের উদ্‌যাপন। সংখ্যালঘুর সংস্কৃতির রক্ষা, যত্নও এ দেশে সরকারের দায়িত্ব।’’

    দিঘার জগন্নাথ মন্দির প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যে সংখ্যালঘু সমাজের মধ্যেও কোথাও কোথাও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের দাবি উঠছে। সেকুলার ফোরাম অব নিউ টাউন ট্রাস্ট বলে একটি মঞ্চের তরফে সম্প্রতি স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই নিয়ে কথা বলা হয়। মুখ্যমন্ত্রীকেও তারা এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে। ওই মঞ্চের তরফে কারও কারও প্রশ্ন, হিডকো যদি দিঘার মন্দির গড়ার শরিক হতে পারে, তা হলে সংখ্যালঘুদের জন্যই বা কেন কিছু করবে না? নিউ টাউনের বাসিন্দা বা তথ্যপ্রযুক্তি তালুকে কর্মরত মুসলিমদের জুম্মার নমাজ পড়ার জায়গা থেকে শুরু করে স্থানীয় গ্রামের সংখ্যালঘুদের কর্মমুখী তালিমের বন্দোবস্ত করার জন্য ওই মঞ্চআর্জি জানাচ্ছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)