মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে দিঘায় জগন্নাথ ধাম উদ্বোধনের দিন যাওয়ার পরে থেকেই দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে নিশানা করতে দেখা গিয়েছিল বিজেপিরই বিভিন্ন স্তরের নেতাদের। এই আবহে বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ দলীয় শৃঙ্খলার বার্তা দিয়েছেন। এরই মধ্যে রবিবার খোদ দিলীপ অবশ্য এক দিকে আজ সোমবার থেকে কিছু বলবেন না বলে জানিয়েছেন। আবার, অন্য দিকে তিনিই দলবদল করে যাঁরা বিজেপিতে এসেছেন, তাঁদের কাণ্ডকারখানা প্রকাশ্যে বলে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন! এমনকি, প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিংহের সঙ্গে কয়লা-পাচারের ‘মাথা’ লালার যোগাযোগ আছে বলেও অভিযোগকরেছেন দিলীপ!
দিলীপকে নিয়ে সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন-সহ এক ঝাঁক বিজেপি নেতা বিভিন্ন মন্তব্য করেছিলেন। এই প্রেক্ষিতে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, “এমন কিছু পোস্ট পক্ষে-বিপক্ষে হচ্ছে, যা নিয়ে দল চিন্তিত। দল কঠোর ভাবে পুরো বিষয়টি দেখছে।” এই সূত্র ধরেই প্রাক্তন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, “রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, মুখপাত্র শমীকদা যা বলেছেন, সেটাইদলের কথা।”
খোদ দিলীপ অবশ্য রয়েছেন মেজাজেই! তিনি বলেছেন, “দলের নীতির বাইরে কিছু করিনি। দল যা খুশি বলতে পারে, শাস্তিও দিতে পারে। কিছু যায় আসে না! কাল থেকে আর কিছু বলব না।” যদিও অর্জুন এক ‘বেআইনি ব্যবসায়ী’র সঙ্গে দিলীপের যোগাযোগ আছে বলে যে অভিযোগ করেছিলেন, তা নিয়ে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি বলেছেন, “লালার সঙ্গে অর্জুনের যোগ আছে, নিয়মিত টাকা নেন। দুর্গাপুরের রাজু (কয়লা কারবারে অভিযুক্ত), যাঁকে খুন করা হল, উনি ওঁরই চেলা ছিলেন!” ‘নব্য বিজেপি’র মুখোশ খুলে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে দিলীপের আরও বক্তব্য, “কে কালো গরুর দুধ খান, কে পাথরের মূর্তি বিক্রি করেন, কে বালি খাদান খুঁড়ে বেড়ান? সব বলতে আরম্ভ করব।”
এই সবের মধ্যেই সূত্রের দাবি, দলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা কার্যালয় মেদিনীপুর থেকে দিলীপের ‘খাসতালুক’ খড়্গপুরে স্থানান্তর করতে চাইছেন তাঁর অনুগামী হিসেবে পরিচিতেরা। দিলীপ-অনুগামীদের ধারণা, খড়্গপুর তাঁদের জন্য বেশি নিরাপদ। এই নিয়ে কিছু বলেননি বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত মণ্ডল। তবে দিলীপ-বিরোধী বলে পরিচিত শিবিরের বক্তব্য, মেদিনীপুর জেলার সদর শহর। তাই জেলা কার্যালয় সেখানেই থাকা উচিত।
এই আবহে দৃশ্যত দিলীপের ‘পাশে’ই ফের দাঁড়িয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস! দলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের বক্তব্য, “দিলীপ ১৮ বছর থেকে আরএসএস করছেন। বিজেপি ও আরএসএসের প্রতি ওঁর আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার নব্য বিজেপির নেই। তবে এখন বিজেপির ভিতরের কাদা প্রকাশ্যে আসছে।”