• ছাদ-ব্যবসা অন্তত ৫০০ ঠিকানায়! পদক্ষেপ সব ক্ষেত্রে হবে তো?
    আনন্দবাজার | ০৫ মে ২০২৫
  • শহরের ৮৩টি জায়গায় ছাদের উপরে বিপজ্জনক ভাবে চলছে পানশালা ও রেস্তরাঁ। এই মর্মে চিঠি দিয়ে কলকাতা পুরসভা ও দমকলকে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু বাস্তবে এই সংখ্যা ৮৩-র চেয়ে অনেক বেশি। দমকল সূত্রের খবর, শহরে ছাদে এমন পানশালা, রেস্তরাঁ চলে ৫০০টিরও বেশি জায়গায়। গত কয়েক দিনের সমীক্ষায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে বলে দমকল সূত্রে জানা যাচ্ছে। এই সব জায়গাতেই এ বার পুলিশ, পুরসভা এবং দমকল একযোগে পদক্ষেপ করতে চলেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এত দিন এ নিয়ে কেন তৎপর হয়নি প্রশাসন?

    পানশালা এবং রেস্তরাঁ মালিকদের যদিও দাবি, বেছে বেছে তাঁদের ব্যবসাকে নিশানা করা হচ্ছে। অধিকাংশই বলছেন, পুরসভা এবং দমকলের থেকে বৈধ ছাড়পত্র নেওয়া রয়েছে তাঁদের। এক রেস্তরাঁ মালিকের মন্তব্য, ‘‘এ ভাবে ঠগ বাছতে তো গাঁ উজাড় হয়ে যাবে! যে ভাবে শহরে হোটেল, অতিথিশালা, পানশালার নামে ব্যবসা চলে, তার সবটা বন্ধ করানো যাবে তো?’’

    দমকল, পুলিশ এবং পুরসভা সূত্রে যদিও দাবি, প্রশাসনিক শীর্ষ স্তর থেকে এ বার কঠোর পদক্ষেপের নির্দেশ এসেছে। ফলে, কড়া হাতেই সবটা সামলানো হবে। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে তালিকায় ৮৩টি জায়গার উল্লেখ থাকলেও আরও এমন তিনটি তালিকা তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া, পুরসভা এবং দমকলও নিজেদের মতো করে তালিকা তৈরি করছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই উত্তর কলকাতায় দমকলের এক-এক জন ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার অফিসারের নেতৃত্বে মোট ছ’টি দল ঘুরছে। বড়বাজারের হোটেলে আগুন লাগার পর থেকে দক্ষিণ কলকাতায় ঘুরছে এমন সাতটি দল। নির্দিষ্ট জ়োন ভাগ করে তল্লাশিতে যাওয়া এই দলগুলিকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

    কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এত দিন কেন এ সব দেখা হয়নি? পুরকর্তাদের দাবি, যে কোনও বহুতলের নির্মাণকাজে অনুমতি দেওয়ার সময়েই ছাদ ‘কমন এরিয়া’ বা সকলের ব্যবহার্য এলাকা বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। ছাদের সিঁড়ি সকলের জন্য খোলা রাখতে হবে, কেউ যাতে ওই অংশ ব্যবহার করতে বাধা না পান— সেই নির্দেশও দেওয়া থাকে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোথাও ছাদে ব্যবসায়িক কাজকর্ম শুরু করে দেওয়া হয়েছে, অথবা কোথাও ছাদ ব্যবহারের অনুমতি নেই বলে তালা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। একাধিক দফায় পুরসভা থেকে গিয়ে পরিদর্শন করে আসার পরেও এমন পরিস্থিতি বদলায়নি। যদিও অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রেই পুরসভার দলকে এই সমস্ত দিকে নজরদারি করতে দেখা যায় না। স্থানীয় থানা বা অন্য সূত্রে কিছু ক্ষেত্রে বলানো হয় ঠিকই, কিন্তু পরে কোনও এক জাদুবলে সমস্তটাই ‘সেটিং’ হয়ে যায়।

    দমকলের কর্তাদের আবার দাবি, যে কেউ ব্যবসায়িক কাজে পুরসভার থেকে ছাড়পত্র নিতে পারেন। দাহ্য বস্তু মজুত করে ব্যবসা করতে দমকলের ছাড়পত্রও প্রয়োজন হয়। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে দেখা যায়, শুধুমাত্র পুরসভার ছাড়পত্র নিয়েই সেখানে দাহ্য বস্তু মজুত রেখে বাণিজ্যিক কাজ শুরু করা হয়েছে।

    দমকলের এক কর্তার কথায়, ‘‘হঠাৎ হানা দেওয়াও যায় না। কারণ, ফায়ার সার্ভিস আইন অনুযায়ী, কোথাও হানা দিতে হলে আগে থেকে নোটিস পাঠাতে হয়। নোটিস পেয়ে রাতারাতি বন্দোবস্ত করে ফেলা হয় বহু জায়গায়। বিপদ ঘটলে কোথা দিয়ে মানুষ নামবেন, কোথা দিয়ে ধোঁয়া বেরোবে এবং অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা আছে কিনা, সেটুকু দেখেই আমাদের ফিরতে হয়। কিন্তু আমরা ফিরে আসার পরে আবার যে-কে-সেই! অনেক জায়গায় সব বন্দোবস্ত থাকলেও শুধুমাত্র বিদ্যুতের খরচ বাঁচাতে সমস্তটাই বন্ধ করে রেখে দেওয়া হয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বড়বাজারের ঘটনার পরে ফায়ার অডিট করতে গিয়ে দেখছি, দিন কয়েক আগেই যেখানে ছাড়পত্র দিয়ে এসেছি, সেখানেই রাতারাতি বেআইনি নির্মাণ তোলা হয়েছে। মানুষ মারার অন্ধকূপ বানিয়ে রাখা হয়েছে। গত দু’দিনে এমন অন্তত ৮০টি জায়গা চিহ্নিত করেছি আমরা।’’

    কিন্তু ১৪টি প্রাণহানির আগে কেন এ সব সামনে আসেনি? কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘কোনটা বেআইনি আর কোনটা নয়, সেটা তাৎক্ষণিক ভাবে পুলিশের বোঝার কথা নয়। পুরসভা ও দমকলকেই এ ব্যাপারে আগে পদক্ষেপ করতে হবে। তবে এই মুহূর্তে সমস্ত থানাকে বলা হয়েছে পানশালা, রেস্তরাঁ, হোটেল বা অতিথিশালাগুলির উপরে আলাদা ভাবে নজর রাখতে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)