দিগন্ত মান্না, কোলাঘাট
‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে’। ছোটবেলায় রবীন্দ্রনাথের এই কবিতাটি পড়তে পড়তে সে ভাবত নিজের কথা। কারণ, তাকে এক পায়েই দাঁড়াতে হয়। জন্ম থেকে একটি পা নেই তার। তালগাছের মতো একদিন মাথা উঁচু করে আকাশে উঁকি দেওয়ার স্বপ্ন দেখত সে। স্বপ্নপূরণের প্রথম ধাপে মিলেছে সাফল্য। ৯০ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও ৪৩৫ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকে সফল কোলাঘাটের অনামিকা দাস।
জন্ম থেকে বাঁ পা নেই কোলাঘাটের বোরডাঙি গ্রামের অনামিকার। ফলে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও প্রতি পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয় তাকে। বাবা অনুকূল দাস গুজরাতে একটি হোটেলে কর্মচারী হিসেবে কর্মরত। আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় মেয়েকে কৃত্রিম সহায়ক অঙ্গ কিনে দিতে পারেননি তিনি। প্রথম দিকে ক্রাচের সাহায্যে চলাফেরা করত অনামিকা। পরে কোলাঘাটের একটি স্বেছাসেবী সংস্থা অনামিকার কৃত্রিম অঙ্গের ব্যবস্থা করে। কৃত্রিম সহায়ক অঙ্গের সাহায্যে এখন হাঁটতে পারে সে। আধুনিক কৃত্রিম পা তৈরি করতে অনেক খরচ। টাকার অভাবে পেরে ওঠেননি অনামিকার বাবা-মা। তাই মাঝেমধ্যে কৃত্রিম পা ছাড়াই এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে হয় অনামিকাকে।
অনামিকার মা অসীমা দাস ভাগচাষি হিসেবে অন্যের জমিতে চাষ করতেন। মেয়েকে স্কুলে এবং টিউশনে দিতে যাওয়া, নিয়ে আসার জন্য চাষের কাজ ছাড়তে হয় তাঁকে। স্বামীর স্বল্প আয়ে কোনও রকমে এক মেয়ে ও এক ছেলের পড়াশোনার খরচ চালান অসীমা। স্থানীয় বাথানবেড়িয়া শ্রীনিবাস বিদ্যামন্দির থেকে এ বার মাধ্যমিক দেয় অনামিকা। তবে সাফল্যের মধ্যেও দুশ্চিন্তায় অনামিকার পরিবার। টাকার অভাবে মেয়ের পড়া বন্ধ হয়ে যাবে না তো? অনামিকার মা অসীমা বলেন, ‘মেয়ে মাধ্যমিকে সফল হয়েছে। আমরা খুব খুশি। কিন্তু উঁচু ক্লাসে পড়াশোনার খরচও অনেক। জানি না কতদিন খরচ জোগাতে পারব!’
অনামিকার কথায়, ‘স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে না পারার কষ্ট অনেক। তাই বলে হাল ছাড়লে চলবে না। এ বার লক্ষ্য উচ্চ মাধ্যমিক। ভবিষ্যতে নার্স হয়ে দুঃস্থদের পাশে দাঁড়াতে চাই।’ কোলাঘাটের যে স্বেছাসেবী সংস্থাটি অনামিকাকে কৃত্রিম অঙ্গ দিয়ে সহায়তা করেছিল, সেই সংস্থার সদস্য অসীম দাস বলেন, ‘অনামিকার লড়াইকে কুর্নিশ জানাই। আমরা ওকে কৃত্রিম অঙ্গ দিয়েছিলাম। যেহেতু ও বড় হয়েছে তাই নতুন মাপের কৃত্রিম পা দরকার। আমরা চেষ্টা করছি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ওর নতুন কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করে দিতে, যাতে ও বিনা বাধায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।’