সমীর মণ্ডল, মেদিনীপুর
বাবা লরির খালাসি। মা গৃহবধূ। বাবার সামান্য কাজ আর ছোট্ট চাষের জমিতে চাষাবাদ করেই চলে সংসার। সেই প্রতিকূলতাকে সঙ্গী করেই মাধ্যমিকে ৬৭৯ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে গোয়ালতোড়ের ছোট নাকদোনা আদিবাসী হাইস্কুলের ছাত্র সৌম্যদীপ ঘোষ।
বাংলায় ৯৩, ইংরেজিতে ৯৭, অঙ্কে ৯৯, পদার্থবিদ্যায় ১০০, জীবন বিজ্ঞানে ৯৩, ইতিহাসে ৯৯ এবং ভূগোলে ৯৮ পেয়ে সৌম্যদীপই স্কুলের সেরা। নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার সঙ্গে জমিতেও কাজ করতে হয় সৌম্যদীপকে। বাড়িতে আলাদা করে গৃহশিক্ষক রাখার সামর্থ ছিল না। তাই ইংরেজি, বিজ্ঞান আর অন্যান্য বিষয়ে তিনজনের কাছে গ্রুপে টিউশন নিত সে। এর পরেও ছেলের এমন সাফল্যে যেমন গর্বে বুক ভরে উঠেছে পরিবারের, তেমনই নতুন করে দুশ্চিন্তায়ও পড়েছেন সৌম্যদীপের বাবা অনুপ ঘোষ।
তিনি বলেন, ‘আমি মাধ্যমিক পাশ করতে পারিনি। লরিতে খালাসির কাজ করি। লেখাপড়ার খরচ চালানো আমাদের পক্ষে অসম্ভব। ছেলে এত ভালো ফল করেছে। কিন্তু ওকে কী ভাবে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াব, সেটা ভেবে পাচ্ছি না।’ একই সুর ছেলের মা কুমকুম ঘোষের গলায়, ‘ছেলের রেজ়াল্ট শুনে চোখে জল এসে গিয়েছে। দরকার হলে ভিক্ষা করব, তবু ছেলের লেখাপড়া বন্ধ হতে দেব না।’
ছোট নাকদোনা আদিবাসী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমলেন্দু দে বলেন, ‘আমাদের স্কুলে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের ছাত্রছাত্রীরাই বেশি। সেই পরিবেশে দাঁড়িয়ে সৌম্যদীপের সাফল্য গর্বের। ওর মতো ছাত্রের পাশে সমাজ ও প্রশাসনের দাঁড়ানো উচিত।’
বাধা আছে। তবু স্বপ্ন দেখা বন্ধ করতে নারাজ সৌম্যদীপ। তার লক্ষ্য আরও বড়। স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু গ্রামের স্কুলে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগ না থাকায় তাকে অন্য স্কুলে ভর্তি হতে হবে। সে বলে, ‘গোয়ালতোড় হাইস্কুলেই ভর্তি হওয়ার কথা ভাবছি। কিন্তু বই, কোচিং, দূরত্ব সবই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’ সৌম্যদীপের স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা বলেন, ‘জঙ্গলমহলের মাটিতে জন্ম নিয়েও সৌম্যদীপ যেন এক আলোকশিখা। যদি অদম্য ইচ্ছা, কঠোর পরিশ্রম আর স্বপ্ন দেখার সাহস থাকে, তা হলে সংসারের অভাব মেধার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। এটা ও প্রমাণ করেছে।’