বিনয় আগরওয়াল, বালুরঘাট
সমস্যা শুনলেই হলো, সব সময়ে উপুড়হস্ত করা তাঁর স্বভাব। কখনও স্কুলের উন্নয়ন, কখনও আবার - হাসপাতাল বা ধর্ম প্রতিষ্ঠান আর্থিক সাহায্য করতে পিছপা হন না দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি ব্লকের ছোট্ট গ্রাম তিওড়ের বাসিন্দা সুশান্ত দাস। গ্রামের কারও কোনও সমস্যা কানে এলেই হলো, সাইকেল নিয়ে ছোটেন বছর আশির 'যুবক'। ধর্মস্থান থেকে হাসপাতাল নির্মাণ, দরিদ্রনারায়ণ সেবা থেকে পরিবেশ রক্ষা, নানা কাজের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অশীতিপরের নাম।
তিওড়ের একটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন সুশান্ত। চাকরি থেকে অবসর নিলেও শারীরিক সমস্যা দূরে সরিয়ে এখনও মানুষের জন্য কাজ করে যান নিঃশব্দে। এক-দু'বছর নয়, ৫০ বছর ধরে সমাজসেবায় ব্যয় করেছেন অন্তত দেড় কোটি টাকা। স্ত্রী বনানী দাসও ছিলেন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। তাঁদের ছেলে সুকান্ত ওডিশার বালেশ্বরে ডিআরডিসিতে বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করেন। দু'মেয়েরও বিয়ে হয়ে গিয়েছে বাইরে। হিলির বাড়িতে স্ত্রী বনানীর সঙ্গেই থাকেন সুশান্ত।
তাঁর কথায়, 'প্রথমে স্ত্রী ও পরে ছেলেমেয়েরা আমায় সব সময়ে উৎসাহ দিয়েছে। এখন সরকার যদি এই এলাকায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কোনও প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চায়, আমার নিজের পাঁচ বিঘা জমি দান করব। এটাই আমার আগামী দিনের লক্ষ্য।' এর আগেও গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তৈরির জন্য জমি দান করেছেন, কখনও আবার স্কুলছুট পড়ুয়াদের জনা গড়ে দিয়েছেন একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্কুলে শৌচাগার বেহাল, চেয়ার-টেবিল-বেঞ্চ পর্যাপ্ত নেই শুনলেই খুলে গিয়েছে তাঁর দানপাত্র।
আগাগোড়া ধর্মনিরপেক্ষ সুশান্ত এলাকায় মন্দির, মসজিদ, গির্জা তৈরিতেও দান করেছেন নিজের সঞ্চয় থেকে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ওপার বাংলার কায়েজউদ্দিন মণ্ডল নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে নির্দ্বিধায় তাঁর বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন বেশ কয়েক মাস। সারা বছর ধরেই দুঃস্থ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শিক্ষাসামগ্রী বিলি করে থাকেন নিজের সাধ্য মতো। ২০১৩-এ বালুরঘাটে একটি চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণেও তাঁর আর্থিক সাহায্য আজও এলাকাবাসীর মুখে মুখে যোরে। বছরভর নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন সুশান্ত। শীতকালে গরিব মানুষদের কম্বল বিতরণ, পরিবেশ রক্ষার্থে বৃক্ষরোপণ ও বিভিন্ন সংস্থায় চারাগাছ বিলি করা তাঁর দৈনন্দিন জীবনেরই অঙ্গ হয়ে উঠেছে। তাঁর সামাজিক কাজের প্রশংসা শুধু হিলি বা বালুরঘাটেই থেমে থাকেনি, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গণ্ডির ছাড়িয়ে আশেপাশের জেলায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁর কথায়, 'বয়সটা কোনও ব্যাপার নয়, আমাকে দিয়ে যদি কারও মঙ্গল হয়, কারও উপকার হয়, ক্ষতি কী। তাই এই বয়সেও যথাসাধ্য কাজ করার চেষ্টা করি।'