এই সময়, বালুরঘাট: ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ক্লাসে কখনও দ্বিতীয় হয়নি সে। টিনের চালের এক চিলতে ঘরে অভাব-অনটনকে দূরে রেখে প্রথম হয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট হাইস্কুল থেকে ৬৮৭ নম্বর পেয়ে এ বার মাধ্যমিকে রাজ্যে নবম হয়েছে অনীক সরকার। তার বাড়ি বালুরঘাট শহরের চকভৃগুতে। দারিদ্র তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।
অনীকের বাবা কমলেশ সরকারের ছোট মুদির দোকান। লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলতে খুব ভালোবাসে সে। সেই সঙ্গে ছবি আঁকে ও তবলা বাজায়। আগামীতে সায়েন্স নিয়েই পড়াশোনা করার ইচ্ছে। ছেলের ফল দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি অনীকের বাবা। তিনি বলেন, 'একটা ছোট মুদির দোকান চালিয়ে অনেক কষ্টে ছেলেকে বড় করছি। ও বরাবরই স্কুলে ভালো ফল করে। তবে এ দিনের আনন্দ সবকিছু ছাপিয়ে গিয়েছে।'
সত্যিই ছোটখাটো একটা দোকান। সামান্য কিছু জিনিসপত্র সাজানো। মোটেই নজরকাড়া নয়। এই দোকান থেকে সামান্য যা আয় হয়, সেটার উপরে ভর করে চলে পরিবার। ছেলের ফল প্রকাশের পরে অনীকের মা আভা সরকারও চোখের জল ফেলেছেন। তাঁর কথায়, 'ওকে কখনও বলতে হয়নি, পড়তে বস। উল্টে বলতাম, এ বারে একটু বিশ্রাম নে।' টেস্টে অনীক পেয়েছিল ৬৮২। তার থেকে আরও পাঁচ নম্বর বেশি পেয়ে এলাকার পাশাপাশি জেলার নাম উজ্জ্বল করেছে সে।
ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে ছিল নিষ্ঠা, কিছু করে দেখানোর খিদে। কমলেশের কথায়, 'শুধু চেয়েছিলাম, ওর স্বপ্নে যেন কোনও কিছু বাধা না হয়ে দাঁড়ায়।' অনীকের রেজ়াল্ট গর্বিত করেছে গোটা চকভৃগুকে। অনীকের বাড়িতে মিষ্টি ও ফুল নিয়ে এসেছেন অনেকে। অনীকের কথায়, 'র্যাঙ্ক করার চেয়ে শেখাটাই আমার কাছে বড়। বাবার দোকানে হোক বা বিজ্ঞানের ল্যাব-যেখানেই থাকি, সব সময়ে জানার খিদের আগুনটা যেন জ্বলতে থাকে।'