• ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত’, রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশের বিরোধিতায় বাম-কংগ্রেস
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৫ মে ২০২৫
  • মুর্শিদাবাদের অশান্তির ঘটনার প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে রিপোর্ট পেশ করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তাতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকার পাশাপাশি পরিস্থিতির অবনতি হলে রাষ্ট্রপতি শাসনের বিষয়টিরও উল্লেখ রয়েছে বলে খবর। আর এই নিয়েই শুরু হয়েছে তীব্র চাপানউতোর। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের তরফে তীব্র বিরোধিতা করে একে রাজ্যপালের ‘পলিটিক্যাল অ্যাসাইনমেন্ট’ বলে উল্লেখ করা হয়। সিপিএম এবং কংগ্রেসও রাজ্যপালকে একহাত নিয়েছেন। রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য রাজ্যপালের রিপোর্টকে স্বাগত জানিয়েছেন।

    সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি শাসনের নামে রাজ্যপালের হাতে ক্ষমতা এলে সমস্যার কোনও সমাধান হবে না। এর আগে এই সংক্রান্ত কুৎসিত অভিজ্ঞতা আছে রাজ্যবাসীর। রাজ্যকে ভেঙে, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলা রোখা যায়নি। এখন দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টাকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মণিপুরে ডবল ইঞ্জিন সরকার থাকার পরও মানুষের জীবন বিপন্ন। রাজ্য সরকারকেই মানুষের সুরক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে। রাষ্ট্রপতি শাসন কোনও সমাধান নয়। ইতিহাস সাক্ষী আছে, রাষ্ট্রপতি শাসন আরও গভীর সমস্যা।’

    প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলেন, ‘রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস রাষ্ট্রপতি শাসন জারির জন্য যে সুপারিশ করেছেন, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক কাঠামোর মূল চেতনায় সরাসরি আঘাত। এটি একদিকে যেমন সংবিধানসম্মত নয়, অন্যদিকে এটি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ, যা ভারতের সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতির পরিপন্থী। নির্বাচিত রাজ্য সরকারের আইন প্রণয়ন ও শাসন ব্যবস্থার উপর নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেওয়ার জন্য অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হিসেবে জরুরি শাসন জারির চেষ্টার স্পষ্টভাবে নিন্দা জানাচ্ছি।’

    সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদ থেকে ফিরে আসার পরেই কেন্দ্রীয় সরকারকে এই রিপোর্ট পাঠান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ওই রিপোর্টে সংবিধানের ৩৫৬ অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করেন তিনি। মন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, রাজ্যপাল বোস রাষ্ট্রপতি শাসন জারির প্রস্তাব করেননি। তিনি বলতে চেয়েছেন, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে সংবিধানের ৩৫৬ ধারা লাগু করার বিকল্প কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আছে। রাজ্যপালের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত এমন ব্যবস্থা করা, যাতে আইনের শাসনের প্রতি জনগণের আস্থা তৈরি হয়।

    অন্যদিকে তৃণমূলের বক্তব্য, বিজেপিকে খুশি করতে নির্বাচনে জিতে আসা সরকারকে ফেলতে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘সীমান্তবর্তী এলাকার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের, বিএসএফের। যদি ওপাশ থেকে এপাশে হামলাকারীরা ঢুকে উস্কানি দেয়, হামলা চালায়, দায়িত্ব বিএসএফের। সেটা দেখেন অমিত শাহ। ফলে রাজ্যপালের সুপারিশে বিএসএফের সঠিক দায়িত্ব পালন করার বিষয়টি থাকার কথা ছিল। কিন্তু তার বদলে বিজেপিকে খুশি করার জন্য বাংলাকে কলুষিত করা হয়েছে। এটা একটা রাজনৈতিক পত্র, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লেখা।’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)