কিরণ মান্না: 'জীবিত থেকেও মৃত' — কথাটা যেন বাস্তবে পরিণত হয়েছে কাঁথি (Contai) পৌরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রিতা রানী বেরা-র জীবনে। গত ছয় মাস ধরে তিনি লক্ষ্মী ভান্ডারের কোনও টাকা পাচ্ছেন না। একাধিকবার পৌরসভা ও সংশ্লিষ্ট দফতরে দৌড়ঝাঁপ করে জেনেছেন, তাঁকে সরকারি নথিতে 'মৃত' (Dead) ঘোষণা করে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কী সমস্যায় গৃহবধূ?
রিতা রানী একজন দরিদ্র গৃহবধূ। স্বামী জয়দেব বেরা কাঠ মিস্ত্রি ছিলেন। গত বছর দেড়েক আগে বাড়ির চালার কাঠামো বানানোর কাজে গিয়ে ছাউনি থেকে পড়ে কোমর ভেঙে বসে পড়েছেন, শারীরিকভাবে অক্ষম। সংসারের হাল ধরেছেন রিতা নিজে। পরিচারিকার কাজ করে কোনওমতে টানাটানি করে সংসার চালান। লক্ষ্মী ভান্ডারের সামান্য টাকাটুকু ছিল তাঁর বাচ্চাদের পড়াশোনা ও নিত্য খরচে বড় সহায়। অথচ এখন সে টাকাও বন্ধ।
এর জেরে শুধু আর্থিক সুবিধাই নয়, বন্ধ হয়েছে রেশন কার্ড, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও আধার কার্ড। সরকারি খাতায় ‘মৃত’ রেজিস্ট্রেশনের জন্য, তাঁকে জীবিত প্রমাণ করার লড়াই এখন তাঁর অস্তিত্বের লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবারের শেষ ভরসা ছিল স্বামীর খোলা ছোট একটি চা-পানের দোকান। সেটিও সম্প্রতি রাস্তা সম্প্রসারণের কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে চরম অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তারা—মাঝে মাঝে পেটে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে পুরো পরিবারকে।
কী বলছে কাউন্সিলর, সরকার?
এই ঘটনার কথা জানার পর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুশীল দাস (বিজেপি) পৌরসভা ও বিভিন্ন দফতরে একাধিকবার আবেদন করলেও কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তিনি অভিযোগ তুলেছেন, শাসক দলের পরিকল্পিত প্রতিহিংসার ফলেই রিতা রানীদের মতো বিজেপি সমর্থকদের এভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে। রিতা রানী বলেন, “আমি বেঁচে আছি, হেঁটে যাচ্ছি, কাজ করছি— তবুও সরকার বলে আমি মরে গেছি! বাচ্চাগুলোর মুখের দিকে তাকাতে পারি না আর।”
এই ঘটনা শুধু রিতা রানীর নয়, এক বৃহত্তর প্রশাসনিক অব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি, যেখানে সাধারণ নাগরিকদের অস্তিত্বই প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়। এই খবর শুধু একটি পরিবারের দুর্দশা নয় — এটি একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় গোটা সমাজ ও প্রশাসনের দিকেই। এই বিষয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প লক্ষ্মী ভান্ডার। কেউ বঞ্চিত হোক আমরা চাই না। বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা নেই, লিখিতভাবে পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।'